সিলেট ১০ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৩৯ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২৩
প্রতিনিধি/ওসমানীনগরঃঃ
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের খাগদিয়র গ্রামের সুরুজ আলীর পুত্র প্রবাসী নুরুল ইসলাম সাজুর (২৫) পর্তুগালে আত্মহত্যা নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার দেখা দিয়েছে। সাজুর পরিবারের দাবি, সাজুর স্ত্রীর প্ররোচনায় সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। আত্মহত্যার আগে নিজের মায়ের সাথে স্ত্রী লুৎফার বিষয়ে নানা কথাবার্তা বলে আত্মহত্যা করবে বলেন জানায় সাজু।
কিন্তু অবশেষে নিজের পুত্রকে আর বাঁচাতে পারলেন না মা অছিয়া বেগম। গত ১৬ মে পুর্তুগালের লিবসন শহরে বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টার দিকে দরজার পর্দা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সাজু। আত্মহত্যার খবর পরিবারকে ওই দিন রাত ১১টায় জানান সাজুর বন্ধু আতিকুর রহমান। আগামী বুধ-বৃহস্পতিবার নাগাত দেশে আসতে পাড়ে সাজুর লাশ এমনটি জানিয়েছেন তার পরিবার।
শুক্রবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে সাজুর মা আছিয়া বেগম বার বার কান্নায় মুছড়া যাচ্ছেন। নিন্তব্ধবাড়ি থেকে কিছু সময় পর পরই ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ।
জানা গেছে, ৬ ভাই বোনের মধ্যে সাজু সবার ছোট। ২০১৯ সালে প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ উমান গিয়ে দুই বছর পর পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে পাড়ি জমান সপ্নের ইউরোপে। ২০২১ সালে গ্রিস হয়ে তিনি পুর্তগালে পৌছান। সেখানে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে মোবাইল ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর বিয়ে করেন একই উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের দরাজপুর গ্রামের কুয়েত প্রাবাসী লুৎফুর রহমানের মেয়ে লুৎফা বেগমের সাথে।
কিছু দিন পর দুই পরিবার বিয়ে মেনে নিলে সাজুর বাড়িতে উঠার জন্য লুৎফাকে জানালে তিনি রাজি হননি।
সাজুর পরিবারের অভিযোগ, সম্প্রতি স্ত্রী লুৎফা স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্য যাওয়ার কথা জানালে আই.ই.এল.টিএস করার সকল খরছ বহনসহ যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পক্রিয়া শুরু করেন সাজু। কথা ছিলো সাজুও যুক্তরাজ্যে চলে আসবে। স্ত্রীকে যুক্তরাজ্য নিতে অনেক টাকার প্রয়োজন তাই পরিবারের সদস্যদেরও টাকা দেয়া বন্ধ করে দেন সাজু।
গত ২ মাস পূর্বে ছেলের কথায় আশা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ১ লক্ষ টাকা যুক্তরাজ্য যাওয়ার জন্য পুত্রবধু লুৎফার হাতেও তুলে দেন সাজুর মা। সব কিছু ঠিকাক থাকলেও বিপত্তি বাদে যুক্তরাজ্য ভিসার আবেদনে। সাজুর কথা মতো স্ত্রী লুৎফা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনে অর্থ লোভে অন্য একজনকে স্বামী বানিয়ে যুক্তরাজ্যে নেওয়ার পায়তারা করেন। বিষয়টি জানলে সাজু বাধা দেন। এই নিয়ে সম্প্রতি কয়েকদিন থেকে তাদের মধ্যে কোলহ লেগই থাকতো। কিছুদিন আগে সাজুর মায়ের কাছে কল দিয়ে এসব বিষয়ে কথা বলেন সাজু।
সাজুর মা ছেলেকে সান্তনা দিয়ে পুত্রবধূর সাথে কথা বলার আশ্বাস দিয়ে লুৎফার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কলে দিলেও রিসিভ করেনি লুৎফা। তাই আর এই বিষয় নিয়ে কথা বলারও সুযোগ হয়নি সাজুর মা আসিয়া বেগমের। গত ১৬ মে রাতে খবর পান সাজু আত্মহত্যা করেছেন।
এই বিষয়ে সাজুর মা বলেন, আমার ছেলে টাকা পায়সা দিয়ে তার স্ত্রী লন্ডন নেয়ার জন্য সকল কাজ করেছে কিন্ত তার স্ত্রী লুৎফা স্টুডেন্ট ভিসার কথা বলে অন্য ব্যাক্তির সাথে (কন্টাক্ট মেরিজ) চুক্তিবদ্ব বিয়ে করে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পায়তারা করলে সাজু মেনে নিতে পারেনি। কিছুদন আগে আমাকে কল দিয়ে এসব বিষয়ে কথা বলে। আমি তাকে বুঝালেও আর বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। আমার ছেলেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে তার স্ত্রী লুৎফা। আমি এর বিচার চাই।
সাজুর বড় বোন মিলি বেগম জানান, প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাত ও আত্মহত্মার প্ররোচনার অভিযোগে বৃহস্পতিবার ওসানীনগর থানায় লুৎফার সাথে ভাইয়ের বিয়ের সকল প্রমানসহ একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা গ্রহন করছে না। আমার ভাই আত্মহত্যা করলেও লুৎফার পরিবারের কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। আমরা খবর পেয়েছি দুই এক দিনের ভিতরে লুৎফা যুক্তরাজ্যে যাচ্ছে। আমি প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানাই বিষয়টি যেন গুরুত্ব দিয়ে আইনি ভাবে দেখা হয়।
এই বিষয়ে জানতে মৃত সাজুর স্ত্রী লুৎফা বেগম ও তার মা ছাবিলা বেগমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আমিন বলেন, সাজু প্রবাসে আত্মহত্যা করেছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানতে পেরেছি। কিন্তু এই বিষয়ে পরিবার ডেথ সার্টিফিকেটসহ অনান্য প্রমানাদী দিতে না পারায় মামলা গ্রহন করা যাচ্ছে না। সঠিক কাগজপত্র পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।