সিলেট ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৩৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
সরকার পতনের একদফা দাবিতে চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে সিলেটের রাজপথে দেখা মিলছে না ‘বড় নেতাদের’। রাজপথে কেন্দ্রীয় এবং জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ পদবীধারী নেতাদের খুঁজে পাচ্ছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। মাঝে মধ্যে শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ কয়েক সেকেন্ডের ঝটিকা মিছিলে অংশ নিয়ে ছবি তুলে আত্মগোপনে চলে যান। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলের বৃহৎ স্বার্থে এ নিয়ে কেউ মুখ না খুললেও বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অবগত করেছেন তারা।
বিএনপির চলমান আন্দোলনে পুরো দেশ উত্তপ্ত। কিন্তু অনেকটা বিপরীত চিত্র সিলেটে। অবরোধ ও হরতাল ডেকে রাজপথে দেখা মিলছে না নেতাকর্মীদের। প্রথম দফা অবরোধের সময় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে বিএনপির মধ্যম সারি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পিকেটিং করতে দেখা যায়। নগরের ভেতরেও তারা পিকেটিংয়ে সক্রিয় ছিলেন। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। আন্দোলন করতে গিয়ে দিলু আহমদ জিলু নামের যুবদলের এক নেতা নিহত হন। কিন্তু আন্দোলনের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় পদবীধারী এবং সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতাদের রাজপথে পাননি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, সিলেটে বিএনপি চেয়ারপার্সনের চারজন উপদেষ্টা রয়েছেন। এই চার উপদেষ্টা হচ্ছেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, আরিফুল হক চৌধুরী, তাহসিনা রুশদির লুনা ও ড. এনামুল হক। চলমান আন্দালনে এই চার জনের কাউকেই রাজপথে দেখা যায়নি। পিকেটিংকালে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত যুবদল নেতা দিলু আহমদ জিলুর মৃত্যুর পর পরিবারকে সান্ত¡না দিতে তার বাড়িতে যান খন্দকার মুক্তাদির ও ড. এনামুল হক। আর ওসমানী হাসপাতালে জিলুর লাশ গ্রহণের সময় সেখানে দেখা গেছে আরিফুল হক চৌধুরীকে। এছাড়া রাজপথে তাদের কাউকেই দেখা যায়নি। উপদেষ্টা ছাড়াও কেন্দ্রীয় সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম, ডা. শাহরীয়ার হোসেন চৌধুরী ও হাদিয়া চৌধুরী মুন্নিরও দেখা মিলেনি আন্দোলন কর্মসূচিতে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মতো রাজপথে খুব একটা দেখা মিলছে না জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগরের সভাপতি নাসিম হোসেইন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর।
কাইয়ূম চৌধুরী শুরুতে দু’একদিন মিছিলে অংশ নিতে দেখা গেছে। আর এমরান আহমদ চৌধুরী মাজে মধ্যে কর্মসূচিতে স্বল্প সময়ের জন্য অংশ নিলেও বেশিরভাগ সময় কাটছে আইনপেশায়। মহানগরের সভাপতি নাসিম হোসাইনের অবস্থাও জেলার কাইয়ূম চৌধুরীর মতো। মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী মাঝে মধ্যে ৮-১০ জন নেতাকর্মী নিয়ে ঝটিকা মিছিল করে গণমাধ্যমে ছবি পাঠিয়ে নিজের সক্রিয়তার জানান দিচ্ছেন। তবে তার মিছিলের স্থায়িত্ব এক মিনিটের বেশি নয় বলে দলের নেতাকর্মীরাই জানিয়েছেন।
বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, রাজনৈতিক কঠিন এই সময়ে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা তাদের কেউই রাজপথে নেই। মামলা ও গ্রেফতার এড়াতে কেন্দ্রের পদবীধারী সিলেটের নেতারা ঢাকায় নিরাপদে অবস্থান করছেন। আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট নগরে অবস্থান করলেও রাজপথে সক্রিয় হচ্ছেন না। এছাড়া জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারাও মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। মাঝে মধ্যে নগরের কম ব্যস্ততম সড়কে ব্যানার টানিয়ে ছবি তুলে গণমাধ্যমে পাঠিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, রাজপথে মুলত বিএনপির মধ্যমসারির নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের নেতৃত্বে তৃণমূলকর্মীরা দলীয় কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছেন। অবরোধ ও হরতাল পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত সিলেটের শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতারও হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট জেলা বিএনপির মধ্যমসারির এক নেতা জানান, চলমান আন্দোলন সংগ্রামে কেন্দ্রীয় পদবীধারী ও সিলেটের শীর্ষ নেতাদের কার কী ভ‚মিকা তা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রের দায়িত্বশীল অন্যান্য নেতারাও তাদের ব্যাপারে অবগত। দলের সুদিন আসলে তৃণমূলের ত্যাগীরা এদেরকে ক্ষমা করবেন না। দলও নিশ্চিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।