যুক্তরাজ্য অভিবাসীদের জন্য সুখবর

প্রকাশিত: ৮:৫৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২৪

যুক্তরাজ্য অভিবাসীদের জন্য সুখবর

লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ

যুক্তরাজ্যে শ্রম শোষণের শিকার হচ্ছেন বিদেশি কর্মীরা। আর তা ঠেকাতে ইতিবাচক হচ্ছে দেশটির সরকার। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রম শোষণ ও শ্রম অধিকার লঙ্ঘনে জড়িত তাদের বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমতি বাতিল করা হবে। অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে।

 

 

যুক্তরাজ্যে অভিবাসী কর্মী নিয়োগকারী অন্তত ১৭৭টি সামাজিক পরিচর্যা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা কেয়ার ফার্মের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও শ্রম শোষণের অভিযোগ উঠার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে লেবার পার্টির সরকার।

 

দেশটির অভিবাসন ও নাগরিকত্ব বিষয়ক মন্ত্রী সীমা মালহোত্রা বলেন, বিষয়টি লজ্জাজনক হলেও সত্য। সামাজিক পরিচর্যা খাতের শূন্যতা পূরণে যেসব অভিবাসী কর্মীরা যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যা খাতে অবদান রাখছেন, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং ঋণের চাপে জর্জরিত হচ্ছেন৷ এটা আমাদের বন্ধ করতেই হবে।

 

 

ব্রিটেনে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দেখা-শোনা, যত্ন-আত্তির জন্য পরিচর্যা কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে। আর দেশটিতে পরিচর্যা কর্মীদের এক-তৃতীয়াংশ হলেন অভিবাসী।

 

 

বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ক রাইটস সেন্টার তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইংল্যান্ডের ১৭৭টি কেয়ার ফার্মের কাছে অভিবাসী কর্মী নিয়োগ দেয়ার স্পন্সরশিপ লাইসেন্স বা যথাযথ অনুমতি ছিল। কিন্তু রেকর্ড বলছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এর আগেও কর্মসংস্থান সংক্রান্ত অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।

 

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই ফার্মগুলো ২০২০ সালে থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ২৫০ বার শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে। এগুলোর মধ্যে আছে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতি, বেতন কেটে রাখা, বৈষম্য, শ্রমঘণ্টার চেয়ে বেশি কাজ করানোর পরও ন্যূনতম মজুরি না দেয়া। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো এই সময়কালে ২২৫টি মামলায় হেরে গেছে। কর্মীদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে ফার্মগুলোকে সবমিলিয়ে ৬০ লাখ পাউন্ড জরিমানা করেছে আদালত।

 

ব্রেক্সিটের পর এসব ফার্ম যাতে আমলাতান্ত্রিক ও ভিসা প্রক্রিয়ায় জটিলতা এড়িয়ে অভিবাসী কর্মীদের সহজে নিয়োগ দিতে পারে সেজন্য স্পন্সরশিপ লাইসেন্স প্রকল্পটি নেয় যুক্তরাজ্য সরকার। কিন্তু এমন ব্যবস্থার কারণে কর্মক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হতে পারে বলে আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলো অধিকার সংস্থা এবং শিক্ষাবিদেরা। শ্রম শোষণ বিষয়ক তদন্তকারী সংস্থা গ্যাংমাস্টারস অ্যান্ড লেবার অ্যাবিউস অথরিটি জানিয়েছে, দেশটিতে আধুনিক দাসত্ব, ঋণে জর্জরিত হওয়া এবং অর্থনৈতিকভাবে শোষণের ঘটনাগুলো বেড়েই চলেছে।

 

ওয়ার্ক রাইটস সেন্টারের সিইও ডোরা-অলিভিয়া ভিকোল বলেছেন, ক্ষমতার এই ভারসাম্যহীনতা কেয়ার ফার্মগুলোকে অভিবাসী কর্মীদের শোষণে উত্সাহ যোগাচ্ছে৷ কর্মীদের অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না৷ কারণ, যিনি মুখ খুলবেন তাকে চাকরিচ্যুত বা ভিসা বাতিলের হুমকি দেয়া হতে পারে।

 

গবেষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে শ্রম আইন লঙ্ঘনের ছোট একটি দিক তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন গবেষকেরা৷ তারা বলছেন, এর পরিধি আরো বিস্তৃত হতে পারে, অন্যান্য খাতগুলোতেও এমন ঘটনা অমূলক নয়।

 

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলতি বছর এক হাজারেরও বেশি কোম্পানির অভিবাসী কর্মী নিয়োগ দেয়ার স্পন্সরশিপ লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করেছে। যুক্তরাজ্য সরকার আরো জানিয়েছে, শ্রম শোষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্তটিকে কর্মসংস্থান আইনে যুক্ত করা হবে।

Spread the love