ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ নিয়ে উপকূলজুড়ে বাড়ছে আতঙ্ক,দুর্বল ভেড়িবাঁধে হুমকিতে ১৯ জেলার মানুষ

প্রকাশিত: ১২:৪৪ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২৫

ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ নিয়ে উপকূলজুড়ে বাড়ছে আতঙ্ক,দুর্বল ভেড়িবাঁধে হুমকিতে ১৯ জেলার মানুষ

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির/বাঘেরহাটঃঃ

সুন্দরবন থেকে ফিরে:বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের উপকূলে অবস্থিত বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা সহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ৯টি উপজেলায় যখন তীব্র দাবদাহ বিরাজ করছে, তখন নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভাব্য একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।

 

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছেন, ২৪ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘শক্তি’, যার নাম প্রস্তাব করেছে শ্রীলঙ্কা।

 

পলাশের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৪ থেকে ২৬ মের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা উপকূল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল পর্যন্ত যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে পারে। তবে বাংলাদেশের খুলনা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

 

বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (BWOT) জানিয়েছে, ১৬ থেকে ১৮ মে’র মধ্যে সাগরে একটি সার্কুলেশন তৈরি হতে পারে, যা ধাপে ধাপে লঘুচাপ, নিম্নচাপ এবং গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

 

এদিকে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়নি। তবে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও নির্দেশনা দেওয়া হবে।

 

উপকূলজুড়ে আতঙ্ক, প্রস্তুতির তাগিদ

ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ নিয়ে উপকূলীয় ১৯টি জেলায় মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলা, ঝালকাঠি, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী জনগণ বারবার ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্র অভিজ্ঞতার কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

 

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের খবর পেলেই জীবনের ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার আশঙ্কা তাদের মধ্যে নতুন করে তীব্র হয়।
ভেড়িবাঁধের করুণ অবস্থা, ঝুঁকিতে জীবন-সম্পদ এসব উপকূলীয় অঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বহু পুরনো ভেড়িবাঁধ এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয়রা জানান, ১৯৬৭-৬৮ সালে নির্মিত এসব বাঁধ দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কারবিহীন অবস্থায় রয়ে গেছে। ফলে প্রতি বছরই জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা, মানুষের জীবন ও সম্পদ ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

 

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধান প্রকৌশলী বলেন,  “উপকূলীয় অঞ্চলের টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সরকারের বার্ষিক বাজেটের স্বাভাবিক বরাদ্দ দিয়ে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই আন্তর্জাতিক দাতাদের যেমন জাইকা, তেমনি অন্যান্য দেশের সঙ্গে এখনই যোগাযোগ শুরু করা জরুরি।

 

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে কোনো স্থায়ী সমাধান আসবে না। যতদিন না শক্তপোক্ত ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ হয়, ততদিন উপকূলীয় মানুষের জীবন থেকে ঝুঁকি যাবে না।”

Spread the love

আর্কাইভ

June 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30