সিলেট ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২৫
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল উপকূলে সুন্দরবনকে ঘিরে আলোচনার ঝড় বহুদিন ধরেই। ২০০৭ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর এই বনকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিপুলসংখ্যক গাছপালা ও প্রাণী ধ্বংস হয়, যা সুন্দরবনের ইকোসিস্টেমে বড় ধরনের আঘাত হানে।
২০১৪ সালে শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় জীববৈচিত্র্যে দেখা দেয় গভীর সংকট। আর বর্তমানে সুন্দরবনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পকে, যেটি বনের মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে স্থাপিত হচ্ছে। পরিবেশবিদদের মতে, এই প্রকল্প থেকে নির্গত ছাই ও বর্জ্য বনের জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সুন্দরবন শুধু একটি বনাঞ্চল নয়, এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। এটি কাঠ, মধু, মোম, গোলপাতা, মাছ, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস। গবেষণা বলছে, সুন্দরবনের আর্থিক অবদান বছরে প্রায় ৫ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু পর্যটন খাত থেকে আসে ৪১৪ কোটি টাকা। দুর্যোগ প্রতিরোধে সুন্দরবনের ভূমিকা অনন্য; প্রতি বছর উপকূলীয় অঞ্চলকে ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষা করে প্রায় ৩ হাজার ৮৮১ কোটি টাকার সম্পদ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের (IFESCU) এক সমীক্ষায় দেখা যায়, সুন্দরবন ২২ ধরনের সেবা প্রদান করে, যার মধ্যে জীবিকা, দুর্যোগ প্রশমন ও পর্যটন প্রধান। বন বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবন বছরে ১৬ কোটি মেট্রিক টন কার্বন সংরক্ষণ করে, যার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ৫-৬ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এখানে রয়েছে ৩০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪২৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং ২৯১ জাতের মাছ। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই বনের ওপর নির্ভরশীল। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আবাসস্থল সুন্দরবন, যা আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ।
তবে উন্নয়ন পরিকল্পনায় সুন্দরবনের ভূমিকা আজও উপেক্ষিত। মংলা বন্দর, রামপাল প্রকল্প বা শিল্পায়নের চেয়ে সুন্দরবনের অর্থনৈতিক মূল্য অনেক বেশি হলেও রাষ্ট্রীয় নীতিতে সেটি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি।
❖ সুন্দরবন রক্ষায় করণীয়!
১ ইকো-ট্যুরিজমের উন্নয়ন
২ জাতীয় পর্যায়ে সুন্দরবন রক্ষা তহবিল গঠন
৩ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা
৪ পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে পর্যটন নিষিদ্ধ
৫ পর্যটকদের সীমিত প্রবেশ
৬ কৃত্রিম অবকাঠামো নির্মাণ না করে বন সম্প্রসারণ
৭ চিংড়ি ঘের নিয়ন্ত্রণ
৮ বন সংরক্ষণে প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ
সুন্দরবনকে ঘিরে রাজনৈতিক দ্বিধা নয়, চাই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। একে কেন্দ্র করে পরিবেশ, অর্থনীতি ও পর্যটনের যে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, তা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের অমূল্য এই ঐতিহ্য যেন অবহেলায় ধ্বংস না হয়, সেই সচেতনতা ও উদ্যোগ আজ সময়ের দাবি।
লেখক:-এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির
বাগেরহাট প্রতিনিধি।