মুখ দিয়ে লিখে এসএসসি পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করছে ঈশ্বর কুমার

প্রকাশিত: ৩:০২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০

মুখ দিয়ে লিখে এসএসসি পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করছে ঈশ্বর কুমার

লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ

চলতি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধী ঈশ্বর কুমার। মুখ দিয়ে লিখে এবারের এসএসসি পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করছে সে । এর আগে মুখ দিয়ে লিখে ঈশ্বর স্কুলের সব পরীক্ষা ছাড়াও পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এবার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের মৃত প্রফুল্ল চন্দ্র সূত্রধরের ছেলে ঈশ্বর কুমার এবার খন্দকার আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

 

ছোটবেলায় সে তার বাবা-মাকে হারিয়েছে। জন্মের পর থেকে তার হাত দুটো অবশ। পা দুটোতেও শক্তি কম। পরীক্ষার খাতায় লেখার সময় কক্ষ পর্যবেক্ষকদের তার খাতার পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দিতে হয়। হাতে শক্তি না থাকায় একা একা খাতা ঠিক করে লিখতে পারে না সে।

 

উল্লাপাড়া এইচটি ইমাম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ঈশ্বর কুমারের বিকল্প ব্যবস্থায় পরীক্ষা দেখতে গেলে দেখা যায় কক্ষে তাকে পৃথকভাবে একটি টেবিল সামনে দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। বেশ দ্রুতই লিখতে পারে সে। ঈশ্বর কুমার মুখ দিয়ে কলমের পেছনের অংশ কামড়ে খাতায় লেখে।

 

ঈশ্বর জানায়,তার স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ইউসুফ আলী মন্টু ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই তার লেখাপড়ায় নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র ঘোষ স্কুলে তার পড়ালেখায় কোনো বেতন নেন না। বাবার নিজস্ব কোনো জায়গা ছিল না। অন্যের ভিটায় ঘর উঠিয়ে বসবাস করে সে।

 

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর একই গ্রামে বসবাসকারী তার বোন রিভা রানী সূত্রধর তাকে লালন-পালন করছে। তারা তিন বোন দুই ভাই। ভাইদের মধ্যে সেই ছোট। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকে। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। শুধু বড় বোনই এখন তাকে মায়ের মতো লালনপালন করছে। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় চলছে তার পড়ালেখা। ঈশ্বর ভবিষ্যতে একজন আইনজীবী হতে চায়।

 

এইচটি ইমাম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম জানালেন, চরম দারিদ্র্য ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে ঈশ্বর কুমার আজ এসএসসি পরীক্ষার আসনে বসেছে। এটি ওর জন্য অনেক বড় অর্জন। দুই হাত অবশ হলেও মুখ দিয়ে লিখে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার এক অদম্য সাহসী যুবক সে। সরকারি নিয়মে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন সবই দেয়া হচ্ছে তাকে।একদিন সে সব প্রতিকুলতা পেরিয়ে মানুষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অধ্যক্ষ।

Spread the love