সিলেট ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:০২ অপরাহ্ণ, মার্চ ৯, ২০২০
একটি সুন্দর জাতি গঠনে মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই। স্বপ্নচারণ ও তা লালনের কারিগর হিসেবে খ্যাত শিক্ষকদের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সব দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সংস্থা শিক্ষার মান উন্নয়নে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ, মান রক্ষা ও মান বৃদ্ধির সবকিছুরই প্রধান শক্তি আমাদের শিক্ষকরা।
কিন্তু নানাবিধ বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার কারণে শিক্ষকরা সফলভাবে তা সম্পাদন করতে পারেন না। ফলে আশাহত হতে হয় আমাদের ও আমাদের গোটা জাতিকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মতামত বিশ্লেষণ করলে আমরা যেসব প্রতিকূলতা ও বাধা-বিঘ্নতার তথ্য পাই তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
প্রশাসনিক জটিলতা : প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পর ব্যবস্থাপনা কমিটির নানা প্রকারের অনিয়ম, দুর্নীতি, দলীয়করণ ও অব্যবস্থাপনাজনিত প্রশাসনিক জটিলতা শিক্ষকদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। শিক্ষকদের শিক্ষাদানে কোনো বিঘœতা সৃষ্টি হলে প্রকৃত শিখন ও শিক্ষণ ফল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
অবকাঠামোগত সমস্যা : অবকাঠামোগত সমস্যা ভালো শিক্ষা নিশ্চিত করার বিশেষ অন্তরায়। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ভবন, কক্ষসংখ্যা ও আসবাবপত্র ইত্যাদির অভাবে প্রাণবন্ত ও আনন্দপূর্ণ শিখন নিশ্চিত করা কঠিন।
অদক্ষ ব্যবস্থাপনা : বাস্তবসম্মত শিক্ষায় মানসম্মত ও পরিকল্পিত শিখন ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়, কিন্তু দক্ষ পরিচালনার অভাবে আনন্দঘন শিখন বাধাগ্রস্ত হয়। প্রধান শিক্ষকের দক্ষতার অভাব এবং পরিচালনা পর্ষদের অভিজ্ঞতার অপ্রতুলতা সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
অর্থনৈতিক টানাপড়েন : পর্যাপ্ত অর্থের জোগান উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করার অন্যতম হাতিয়ার। আনন্দঘন শিখন নিশ্চিতকরণে পাঠসংশ্লিষ্ট সামগ্রীর জোগান দিতে গিয়ে একজন শিক্ষককে বহুলাংশেই হিমশিম খেতে হয়। তখন আনন্দঘন ও শিশুবান্ধব শিখন নিশ্চিত করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।
দলীয় রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা : দেশের সব মানুষই কোনো না কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং তা করাও খারাপ নয়। কিন্তু সে রাজনীতি যদি ব্যক্তিস্বার্থে প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয় তা হয় খুবই খারাপ। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তা তাদের পেশার কাজে লাগিয়ে থাকেন। ফলে ছাত্রছাত্রীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। তাই দলীয় রাজনীতি সুশিক্ষা নিশ্চিত করার অন্তরায়।
অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ : সুশিক্ষা প্রদানে শিক্ষকের যোগ্যতা বড় একটি বিষয়। অযোগ্য লোকদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে সুশিক্ষা তো হয়ই না বরং যোগ্য শিক্ষকদেরও শিক্ষাদান নানাভাবে ব্যাহত হয়। অযোগ্যদের দাপটে যোগ্যরা ঠিকমতো পাঠদান করতে পারে না এবং প্রতি ক্ষেত্রেই তারা অবহেলিত হয়, ফলে মানসম্পন্ন শিক্ষাদান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যায়।
অবশেষে আমরা বলতে পারি, এ ছাড়াও আরও অনেক বাধা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান থাকলে সেখানে সমস্যা বা বাধা-বিপত্তি থাকবে, তবে তা দ্রুত সমাধান করা বা বিকল্প সমাধানের চেষ্টা করা অতীব আবশ্যক। তাই ওপরে বর্ণিত বাধা-বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা-প্রতিকূলতা ও সমস্যা-সংকটগুলোর যৌক্তিক সমাধান করতে পারলে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা অতি সহজেই সম্ভব হবে।
সর্বোপরি শিক্ষার গুণগত মান ঠিক রাখতে শিক্ষালয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক ও অভিভাবকদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে সব বাধা অতিক্রম করতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
ড. মাহমুদুল হাছান : প্রাবন্ধিক, শিক্ষা গবেষক ও প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা