অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিসমাসে রেস্টুরেন্ট বন্ধ, বিপাকে পর্যটকরা

প্রকাশিত: ৯:১৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪

অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিসমাসে রেস্টুরেন্ট বন্ধ, বিপাকে পর্যটকরা

খলিলুর রহমান স্টালিন, অস্ট্রেলিয়াঃঃ

বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব। ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। আর এ ধারাবাহিকতায় এবারও পালিত হয়েছে এই দিবসটি। অন্যান্য দেশের ন্যায় অস্ট্রেলিয়াতেও এই দিবসটি জাকজমকভালে পালিত হয়েছে। তবে ধর্মীয় ওই দিবসটিকে কেন্দ্র করে দেশটির রাজধানী ক্যানবেরাসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ রয়েছে খাবাবের দোকানগুলো। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকাল পর্যন্ত ক্যানবেরা নগরী ও সিডনির বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।

 

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ক্যানবেরা নগরীর কুয়োং স্ট্রিট, ব্র্যাডন, লন্ডন সার্কিট, মার্কাস ক্লার্ক স্ট্রিট, নর্থবোর্ন এভেনিউ, লন্সডেল স্ট্রিট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাতে গোনা কয়েকটি রেস্টেুরেন্ট খোলা থাকলেও বেশির ভাগ রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো রেস্টেুরেন্টে বন্ধের নোটিশ সাটানোও রয়েছে।

 

লন্সডেল স্ট্রিটে গিয়ে দেখা গেছে, পিৎজা গুস্টো, রাই ক্যাফে, সেন নুডস, ওয়াকিটআপ, ইয়াত বান টং ডাম্পলিং হাউসসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ওয়াকিটআপ ও ইয়াত বান টং ডাম্পলিং হাউসে ছুটির নোটিশ সাটানো রয়েছে। ওয়াকিটআপের নোটিশে বড় দিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ২ জানুয়ারি রেস্টুরেন্টটি খোলা থাকবে বলেও ওই নোটিশে তথ্য দেওয়া আছে। একই অবস্থা ইয়াত বান টং ডাম্পলিং হাউস নামের রেস্টুরেন্টটিরও। সেই রেস্টুরেন্টের নোটিশে বলা হয়েছে, ২৫ ডিসেম্বর থেকে পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। একই সাথে বড় দিনের শুভেচ্ছাও নোটিশটিতে জানানো হয়েছে।

 

ক্যানবেরা সিটির মার্কাস ক্লার্ক স্ট্রিট এলাকায় অবস্থিত মাল্টি ইয়ামি রেস্টুরেন্ট। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, বড় দিন উপলক্ষ্যে সেই রেস্টুরেন্টও বন্ধ রয়েছে। একই সাথে কাস্টমারদের জন্য একটি নোটিশ সাটানো রয়েছে। সেই নোটিশে লেখা রয়েছে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রেস্টুরেন্টটি বন্ধ থাকবে। আগামী ৭ জানুয়ারি রেস্টুরেন্টটি পুনরায় খোলা হবে।
 

বৃহস্পতিবার বিকালে সিডনী থেকে আসা পর্যটক স্টিপেন  জানান, সকালে পরিবারসহ ক্যানবেরাতে ঘুরতে আসলাম। কিন্তু বড় দি উপলক্ষে অনেক খাবারের দোকান বন্ধ রয়েছে। তাই পছন্দের খাবার খাইতে পারছি না। শুধু স্টিপেনই নয়, তার মতো অনেকেই ঘুরতে এসেছেন। ডাইনেল নামের আরেক পর্যটক বলেন, আমি বড় দিনের বিকালে ক্যানবেরাতে এসেছি। এখানে দুই দিন থাকব। তবে বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। আর যেসব রেস্টুরেন্ট খোলা আছে সেই রেস্টুরেন্টগুলো খাবারে বাড়তি দাম দেওয়া হচ্ছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়াতে সরকারি ছুটি চলছে। আর সরকারি ছুটির দিনে কাজ করলে কর্মচারিদের বেতনের দ্বিগুন টাকা দিতে হয়। তাই অনেকেই দোকান বন্ধ রাখেন। আর যারা খোলা রাখেন তাদের অনেকেই নোটিশ দিয়ে প্রটিটি আইটেমে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি দাম নিয়ে থাকেন। এতে শুধু পর্যটকরাই নয়, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় খাবার ডেলিভারি ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিরাও বিপাকে পড়েছেন।

 

আতিক আহমেদ নামের এক বাংলাদেশী বলেন, আমি স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়াতে আসছি। দীর্ঘ দিন থেকে ক্যানবেরা সিটিতে খাবার ডেলিভারি দিয়ে আসছি। কিন্তু বড় দিন উপলক্ষ্যে অনেক রেন্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যায়, স্কুল, কলেজ বন্ধ হওয়াতে হোস্টেলগুলোও বন্ধ রয়েছে। এতে ইনকামে ধস নেমেছে।

 

তৌফিক আহমেদ নামের এক বাংলাদেশী বলেন, খাবার ডেলিভারির অবস্থা ভালো নেই। সারাদিনে ১০০ ডলার ইনকাম করা যায় না। তাই দুই দিন থেকে ডেলিভারি দিতে যাই না।
এদিকে, ক্যানবেরা সিটির মতো সিডনি, মেলবনের পর্যন্টন এলাকাগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ট সিডনির জার্ভিস বে, ফিটজরয় ফলস, মস ভ্যাল পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, সেই এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোও বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ঘুরতে আসা পর্যটনকরা।

 

জার্ভিস বে সাইন্স লুকআউট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে দুই খাবারে দোকান খোলা আছে। একই পিৎজা ও একটি ইন্ডিয়ান খাবারের দোকান। সেই দোকানগুলোর সামনে অনেক পর্যটক ভিড় করছেন। তবে ইন্ডিয়ান খাবারের দোকান রিজার্ভ থাকায় খাবার খেতে আসা কাস্টমাররা না খেয়েই ফিরে যাচ্ছেন।
আব্দুর রহমান নামের এক পর্যটক বলেন, আমি দীর্ঘ দিন থেকে ক্যানবেরাতে বসবাস করছি। আজ (বুধবার) বড় দিন। ওই দিন সরকারি ছুটি। তাই আমার বড় ভাই ও বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। কিন্তু খাবারের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি। তিনি বলেন, খাবারের জন্য জার্ভিস বে সাইন্স লুকআউট এলাকায় এসেছিলাম। সেখানে এসে দেখি দুটি দোকান খোলা আছে। বাকি দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে দুটি দোকানের মধ্যে একটি দোকান রিজার্ভ থাকায় তারা সবার কাছে খাবার বিক্রি করছে না। তাই বাধ্য হয়ে পিৎজা খেতে হয়েছে আমাদের।

 

অলিদ হাসান নামের আরেক বাংলাদেশী বলেন, আমি ক্যানবেরাতে বসবাস করি। বড় দিনে সিডনির কয়েকটি বিচে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেই এলাকাগুলোতে খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় রাতে ক্যানবেরাতে এসে খেতে হয়েছে।

Spread the love