লকডাউনে বেড়েছে পারিবারিক নির্যাতন

প্রকাশিত: ৬:১৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২০

লকডাউনে বেড়েছে পারিবারিক নির্যাতন

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃঃ
মহামারি রূপ নেওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে। ভাইরাসটির সংক্রমণে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ হাজার ৩৭০ জন। সারা বিশ্বে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭২৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

মহামারি আকারে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় এর বিস্তার রোধে একই ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, যথাসম্ভব গৃহে অবস্থান করা, বাইরে বের না হওয়া এবং প্রত্যেককেই এসব মেনে চলা।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে অবরুদ্ধ, আংশিক অবরুদ্ধ, জরুরি অবস্থা জারিসহ নানা ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। মোটকথা মনুষকে ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ফলে মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পারিবারিক সহিংসতা ও গৃহ নির্যাতনের পরিমান।

বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে আজ শনিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানষের জীবন বাঁচাতে বিশ্বব্যাপী গৃহীত পদক্ষেপ লকডাউনের কারণে আমাদের সমাজের একটি দুর্বল গ্রুপ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আর এই দলে রয়েছে নারী ও শিশুরা। বিশ্বব্যাপী চলা হোম কোয়ারেন্টিনে নির্যাতনকারীদের হাতে আরও নির্যাতিত হবে নারী ও শিশুরা। আর এর আলামত ইতোমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে।

চীনের হুবেই প্রদেশ

মহামারি করোনার উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশে গৃহ নির্যাতনের পরিমান তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউন থাকা অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬২টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে যা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল মাত্র ৪৭টি।

নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করা সাবেক পুলিশ অফিসার ওয়ান ফি সিক্সথ টন ওয়েবসাইট কে বলেন, ‘পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধিতে এই মহামারির প্রভাব রয়েছে। আমাদের পরিসংখ্যান মোতাবেক, লকডাউন চলাকালীন ৯০ শতাংশ সহিংসতার পেছনে কোভিড-১৯ মহামারির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।’

ব্রাজিল

ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরিও এর পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বিচারক আদ্রিয়ানা মেল্লো বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি এই বন্দীদশায় পারিবারিক সহিংসতা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এমন পরিস্থিতিতি মোকাবিলায় আমাদের উচিত শান্ত থাকা।’

স্পেন

স্পেনের কাতালান সরকার জানিয়েছে, জরুরি অবস্থা শুরুর প্রথম কয়েকদিনে আমাদের হেল্প-লাইনে কলের পরিমান ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্পেনে জরুরি অবস্থায় বাইরে বের হলে জরিমানা করা হয়। তবে কোনো নারী যদি নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে বাইরে বের হন তবে তাকে জরিমানা করা হবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সাইপ্রাস

গত ৯ মার্চের পর থেকে সাইপ্রাসের হেল্প-লাইন কলের পরিমান ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির রাজধানী নিকোসিয়ায় অবস্থিত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ সংস্থার প্রধান অন্নিতা ড্রাকা বলেন, ‘এটি একটি নাটকীয় উত্থান এবং কেবল বেড়েছে।’

ইতালি

ইতালিতে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, হেল্পলাইনে কল আসার পরিমান দ্রুত হ্রাস পেয়েছে, তবে তার পরিবর্তে তারা মেসেজ এবং ইমেল পাচ্ছেন।

ভায়োলেন্স নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে নারীদের নিয়ে কাজ করা ডিআইআরইয়ের সভাপতি লেলা প্যালাডিনো বলেন, ‘একটি বার্তা এমন ছিল যে, এক নারী নিজেকে বাথরুমে আটকে রেখে সাহায্য চাইছিল। এই অভূতপূর্ব জরুরি অবস্থায় নারীরা বাইরে যেতে না পারায় আরও হতাশা বৃদ্ধি পেয়েছে।’

জার্মানি ও ভারত

জার্মানিতে লকডাউনের সময় নারীদের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধি পাবে বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশটির পার্লামেন্ট মেম্বার ও গ্রিন পার্টির নেতা ক্যাথরিন গোরিং এককারডিট।

এছড়াও আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের উত্তর প্রদেশে নারী নির্যাতনের পরিমান বেশি হওয়ায় সেখানে লকডাউনকালীন একটি নতুন হেল্প-লাইন চালু করা হয়েছে। এছাড়াও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে, ‘তোমার কণ্ঠস্বর নয়, করোনাকে দমিয়ে রাখো।’

Spread the love

আর্কাইভ

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031