সিলেট ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:১১ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০২০
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
সিলেটে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা নিয়ে চলছে তুঘলকিকান্ড। রিপোর্ট পাওয়ার আগেই সুস্থ হয়ে উঠছেন আক্রান্তরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাগিদ দেওয়ার পরও ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে বাড়ানো হচ্ছে না পরীক্ষা। অথচ নমুনা বেড়ে গেলে ওসমানীর ল্যাবের এক তৃতীয়াংশ জনবল নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ল্যাবে দ্বিগুণ পরীক্ষা হচ্ছে।
ওসমানীর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় খামখেয়ালিপনা ও রিপোর্ট নিয়ে গাফিলতির কারণে মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে আন্দোলনেরও প্রস্তুতি চলছে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে করোনা শনাক্তের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় গত ৭ এপ্রিল। শুরুতে পুরো সিলেট বিভাগের নমুনা পরীক্ষা হতো এই ল্যাবে।
কিন্তু নমুনার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ওসমানীর ল্যাবে শুধু সিলেটের নমুনা রেখে বাকি তিন জেলার নমুনা পাঠিয়ে দেওয়া হতো ঢাকায়। এর মধ্যে গত ১৯ মে শাবিপ্রবিতে আরও একটি ল্যাব চালু হলে সেখানে পরীক্ষা শুরু হয় সুনামগঞ্জের নমুনা। আর হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের নমুনা এখনো ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা করানো হচ্ছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে শুরু থেকে প্রতিদিন দুই রাউন্ডে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। নমুনা বেড়ে যাওয়ায় পরীক্ষা বাড়াতে কয়েক দফা তাগিদ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এরপরও পরীক্ষা আটকে আছে ১৮৮ নমুনায়।
ল্যাব সূত্র জানায়, এক রাউন্ডে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। সে অনুযায়ী ওসমানীর ল্যাবে প্রতিদিন কাজ হচ্ছে ৪-৫ ঘণ্টা বাকি সময় ল্যাব ফ্রি থাকছে। পরীক্ষা বাড়িয়ে চার রাউন্ড অর্থাৎ দ্বিগুণ করা হলে সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। কিন্তু ল্যাব সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার অভাবে বাড়ছে না নমুনা পরীক্ষা। ফলে ল্যাবে নমুনা জট লেগেই থাকছে। গতকাল পর্যন্ত ল্যাবে ১১০০ নমুনা জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ল্যাব প্রধান ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ময়নুল হক।
এদিকে, নমুনা জমে গেলে একসঙ্গে কয়েক হাজার পাঠানো হয় ঢাকায়। সেখান থেকে রিপোর্ট আসতে সময় লাগে দুই সপ্তাহ। এর মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন আবার অনেকে রিপোর্টের দেরি দেখে বাইরে বের হয়ে সংক্রমণ বাড়াচ্ছেন। ওসমানীর ল্যাবে পরীক্ষা বৃদ্ধি না হওয়া প্রসঙ্গে ডা. ময়নুল হক বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের মূল কাজ হচ্ছে পড়ালেখা করানো। এরপরও আমরা বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে ল্যাব চালাচ্ছি।
এ ছাড়া কিট সংকট থাকায়ও পরীক্ষা বাড়ানো যাচ্ছে না। নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে হলে সিলেটে আরও দুটি ল্যাব বসানো প্রয়োজন।’ এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, ওসমানীর ল্যাবে সাধারণ মানুষের নমুনা পরীক্ষা হয় না। ভিআইপিদের পরীক্ষা নিয়েই ব্যস্ত থাকে ল্যাব।এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. ময়নুল বলেন, ‘প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও অফিসের লোকজনের নমুনা আসে। তাদের অনুরোধও রাখতে হয়। তবে সাধারণ মানুষের নমুনা পরীক্ষা হয় না এটা ঠিক নয়।’
এদিকে, ৬১ জনবল নিয়ে ওসমানীর ল্যাবে প্রতিদিন ১৮৮ নমুনা পরীক্ষা হলেও মাত্র ১৯ জন নিয়ে একই পরিমাণ পরীক্ষা হচ্ছে শাবিপ্রবির ল্যাবে। নমুনা বেড়ে গেলে শাবিপ্রবির ল্যাবে প্রতিদিন চার রাউন্ডে ৩৭৬টি নমুনাও পরীক্ষা হচ্ছে। তিনগুণ জনবল নিয়ে এখন পর্যন্ত ওসমানীর ল্যাবে এক দিনও এই পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হয়নি।
শাবিপ্রবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ হাম্মাদুল হক জানান, ‘শাবির ল্যাবে নমুনা বেড়ে গেলে মানবিক দিক বিবেচনা করে চার রাউন্ডও (৩৭৬টি) পরীক্ষা করা হয়। যে কারণে ল্যাবে নমুনা জট লাগে না। কিন্তু ছাত্র ও শিক্ষকদের নিয়ে ল্যাব চালানোর কারণে সবসময় চার রাউন্ড করা সম্ভব হয় না। শিক্ষক ও ছাত্রদের ক্লাস থাকায় প্রতিদিন দুই রাউন্ডই (১৮৮টি) পরীক্ষা করতে হচ্ছে।’