সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী আর নেই

প্রকাশিত: ২:০২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০

সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী আর নেই
৬৫ Views

লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ

মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সেক্টরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু ওসমান চৌধুরী আর নেই। আজ শনিবার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। গত ৩০ আগস্ট তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী আবুল বাশার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি দুই মেয়েসেহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আবু ওসমান চৌধুরী সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের (এসসিএফ) সহ-সভাপতি ছিলেন।

 

আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি তার শোকবার্তায় বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরীর অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

 

রাষ্ট্রপতি শোকবার্তায় মরহুম আবু ওসমান চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।

শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে আহ্বায়ক করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র অন্যতম সদস্য ছিলেন লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী।

 

আবু ওসমান চৌধুরী ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার মদনেরগাঁও গ্রামের চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আব্দুল আজিজ চৌধুরী এবং মায়ের নাম মাজেদা খাতুন। নিজ গ্রাম মদনেরগাঁওয়ের ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।

 

১৯৪৫ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রামে মানিকরাজ জুনিয়র হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন।চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ১৯৫১ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন।পরে ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি ভর্তি হন তিনি, কিন্তু ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, শারীরিক অসুস্থতা ও পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে ঢাকা কলেজে এইচএসসি সম্পন্ন করতে পারেননি। পরে ১৯৫৪ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৫৭ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন।

 

১৯৫৭ সালে আবু ওসমান ঢাকা এয়ারপোর্টে ‘এয়ারপোর্ট অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এই পদের প্রশিক্ষণে থাকাকালীনই তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশনের জন্য প্রদত্ত পরীক্ষায় পাস করায় আন্তঃবাহিনী নির্বাচন বোর্ডে উপস্থিত হওয়ারর ডাক পান। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কোহাটে অবস্থিত অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলে (ওটিএস) যোগ দেন। সেখানে ৯ মাসের কঠিন প্রশিক্ষণের পর ১৯৫৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন৷

 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আবু ওসমান চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর পদে কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। অপারেশন সার্চলাইটের সংবাদ পেয়ে ২৬শে মার্চ সকালে বেলা ১১টায় তিনি চুয়াডাঙার ঘাঁটিতে পৌঁছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সসৈন্য যোগ দেন। এর আগে ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ আবু ওসমান চৌধুরী পদ্মা মেঘনার ওপারে কুষ্টিয়া থেকে বরিশাল জেলা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাকে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গন নামকরণ করে সে রণাঙ্গনের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন৷

 

পরে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার তাকে দক্ষিণ পশ্চিমাংশের আঞ্চলিক কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করেন৷ মে মাসের শেষার্ধে প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনকে দুই ভাগ করে ৮নং ও ৯নং সেক্টরদ্বয় গঠন করেন এবং ৮ নং সেক্টরের দায়িত্বে আবু ওসমানকে নিয়োগ করা হয়৷ প্রাথমিকভাবে সে সময় ওই সেক্টরের অপারেশন এলাকা ছিল কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর ও পটুয়াখালী জেলা। মে মাসের শেষে অপারেশন এলাকা সংকুচিত করে কুষ্টিয়া ও যশোর, খুলনা জেলা সদর, সাতক্ষীরা মহকুমা এবং ফরিদপুরের উত্তরাংশ নিয়ে এই এলাকা পুনর্গঠন করা হয়। এই সেক্টরের প্রধান ছিলেন আবু ওসমান চৌধুরী এবং পরে মেজর এম এ মঞ্জুর৷

Spread the love

Follow us

আর্কাইভ

December 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031