বিদেশে যাচ্ছে বিশ্বনাথের শুঁটকি

প্রকাশিত: ২:৫৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০

বিদেশে যাচ্ছে বিশ্বনাথের শুঁটকি
Spread the love

৭৪ Views
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথঃঃ
বাঙালীর প্রদান খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম একটির নাম হল শুটকি। রুচি পরিবর্তনশীল গুনগিুনদের দিক থেকে শুঁটকি মাছকেই সবাই পছন্দ করেন। শুটকি মাছের গন্ধের সাথে স্বাদও আলাদা যা সবার পছন্দের। শুটকি মাছ বাঙালির অনেকের কাছে অপছন্দের হলেও, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশ (ভারত) ইন্ডিয়ায় সিলেটের শুটকি মাছই তাদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম।
শুটকি মাছের শুটকি ভর্তা, বা ভুনা করলে অনেক স্বাদও মিলে এবং বেশি ভাত খাওয়া যায়। শুটকি মাছ সংরক্ষণ এবং রান্না দুই সুবিধা থাকায় তাজা মাছের তুলনায় বর্তমানে শুঁটকির বিক্রি বেড়েছে উল্যেখযোগ্য হারে। এছাড়া শুঁটকিতে উচ্চমাত্রার আমিষ বা প্রোটিন, ভিটামিন ‘ডি’ ও কোলেস্টেরল রয়েছে। শুঁটকি কম-বেশি সবারই প্রিয়।
বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের মাহতাবপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা ।
বিশেষ করে সিলেট এলাকার প্রবাসীদের কাছে শুঁটকি অত্যন্ত প্রিয় খাবার। ফলে দিন দিন সিলেটে বাড়ছে শুটকির কদর। বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের মাহতাবপুরের ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শুঁটকি সরবরাহ করছেন।
অগ্রহায়ন থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত এই চার মাস শুটকি তৈরীর ভরা মৌসুম। এই স য়ে বাজারে মাছের মূল্য কম থাকায়, বেশি পরিমাণে শুঁটকি তৈরি সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়, বিশ্বনাথ উপজেলায় বানানো এই শুঁটকি দেশের বাজারেই নয় চলে যাচ্ছে ব্রিটেন, আমেরিকা ও সৌদি আরব, ভরতসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে। এতে মাহতাবপুরের শুঁটকির বাজারও একটি শিল্প হয়ে উঠেছে। এ ব্যবসা নিয়ে অনেক সম্ভাবনা আছে বলে দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের বিশ্বনাথ, ও জালালাবাদ এলাকার মধ্যবর্তী মাহতাবপুরের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে শুঁটকির প্রায় চল্লিশটি ডাঙ্গি রয়েছে। এরা খাঁচার ওপর মাছ শুকিয়ে এখন শুটকি তৈরি করছে। বিশ্বনাথআর শুটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ২ থেকে ৩শত নারী-পুরুষ। মাহতাবপুরের প্রায় তিন শতাধীক নারী ও পুরুষ শ্রমিক শুটকির জন্য মাছ কাটা এবং ধোঁয়ার কাজ করেন। বিনিময়ে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা মজুরি পান ১৩০-১৫০টাকা। এসক কাটা মাছে লবন ছিটিয়ে ৩/৪ ঘন্টা রেখে রোদে শুকানোর জন্য প্রথমে চাচঁ বিছিয়ে মাটিতে এবং কিছু শুকানোর পর মাঁচায় দেওয়া হয়। প্রায় পাচঁ থেকে ছয়দিন শুকানোর পর, টিল মেরে প্রক্রিয়াজাত করে শুটকি তৈরি করা হয়। এখানে পুঁটি, টেংরা, বাইম, চিংড়ি, চাঁন্দা ও কাইখ্যা এইসব প্রজাতির মাছের শুটকি করা হয়।
তাদের এ শুটকি গুলো ব্রাম্মণবাড়িয়া বা ঢাকার কিছু লোক পাইকারি ধরে ক্রয় করে নেন, এরা আবার এগুলো ভারতে বিক্রি করেন, তাদের বিক্রিত শুটকিগুলো সব জায়গায় বেশ জনপ্রিয়, তাই তারা এ মৌসুমে দুই থেকে তিন কোটি টাকার শুটকি পাইকারী দরে বিক্রি করে থাকেন বলে জানান উৎপাদনকারীরা।
মাহতাবপুরের একটি বড় শুটকির আড়তের মালিক মান্নান , তারা প্রতি বছরে ৬ মাস শুটকি বিক্রি করতে পারেন। তাদের শুটকি গুলো পাইকারদের কাছে খুবই জনপ্রিয়, তাই তারা এগুলো বিক্রি করে আনন্দিত।
শুটকির আড়তের নারী শ্রমিক জুলেখা বেগম বলেন, সারাদিন কাজ করে মাত্র ১৫০ টাকা মজুরিতে আমাদের সংসার চলে না। আমার গরিব মানুষ নদীতে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে, বাচ্চাদের লেখাপড়া করানোর জন্য কোন কাজ না পেয়ে, অভাবের সংসারে অল্প টাকায় এ কাজ করি। তাতে আমাদের সংসার চলে না। এ ব্যবসার ভবিষ্যৎ আছে’ দাবী করে ডাঙ্গারীর মালিক মাহতাবপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন, ধলিপাড়া গ্রামের আলতাব মিয়া ও দিঘলী রামপুরের কালা মিয়া বলেন, এই মৌসুমে তারা শুটকির উৎপাদন করে থাকেন। এটা অল্পদিনের লাভজনক ব্যবসা। সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ত ছড়ারপাড়ে (মাছিমপুর) এসব শুটকি বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে সারাদেশে ও বিদেশে পৌঁছে যায়।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, বিশ্বনাথের মাহতাবপুরে গত ২০১৮/১৯ বছরের তথ্যমতে ২শত ৯৭ মেট্রিকটন সবজাতের শুটকি তৈরি হয়। দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করা হয়। বিশ্বনাথ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, আমাদের কাছে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কোন তালিকা নেই তবে, উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সব সময় তদারকি রয়েছে।

Spread the love

Follow us

আর্কাইভ

June 2023
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930