সিলেট ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০
বিজয় রায়, সুনামগঞ্জঃঃ
ছাতকে পুরাতন বাঁধ ঘষামাজা ও আংশিক সংস্কারের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফসল রক্ষা বাঁেধর কাজও চলছে ধীর গতিতে। গত বছরে নির্মিত বাঁধ প্রায় অক্ষত অবস্থায় থাকায় চলতি বছরে এখানের পিআইসি-১ এ পুরাতন বাঁধ সংস্কারের নামে সরকার প্রদেয় অর্থ লুটপাটের চেষ্টা চলছে। পুরাতন বাঁধে উল্লেখযোগ্য কোন কাজ না করায় পিআইসি-১ আওতাভুক্ত কৃষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে। এ ছাড়া গত বছরের ১নং পিআইসির বিতর্কিত সদস্য সচিব আব্দুর রশিদকে চলতি বছর পিআইসিতে সভাপতি করে তাকে পুরস্কৃত করায় বাঁধের সুষ্ট কাজ নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন এলাকার কৃষকরা।
গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারী এ হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান ও সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খান। উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের নাইন্দার হাওরের ১নং পিআইসি কর্তৃক নির্মাণাধিন বাঁধ পরিদর্শনকালে বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনিয়ম ও ত্রুটির কথা উল্লেখ করেন ডিআইজি। এসব ত্রুটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরন করার নির্দেশও দেন তিনি। বাঁধের স্লোপ যথাযথ না হওয়ায় তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে পিআইসির কাছ থেকে সঠিক কাজ আদায় করে নেয়ার জন্য দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী ভানুজয় দাসকে নির্দেশ দিয়ে ছিলেন। পাশপাশি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার জন্য ডিআইজি কামরুল আহসান, পিআইসির সভাপতিসহ সদস্যবৃন্দকে তাগিদ দেন।
পরিদর্শনকালে এসপি মিজানুর রহমান, এডিশনাল এসপি দোলন মিয়া, তৎকালীন ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমানসহ কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। জানা যায় গত বছরের বিতর্কিত ব্যক্তি আব্দুর রশীদকে বাদ দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও কৃষকদের মতামতের ভিত্তিতে ১নং পিআইসি গঠন করে প্রস্তাব আকারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরন করা হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে প্রেরিত কমিটি বাতিল করে বিতর্কিত আব্দুর রশীদকে সভাপতি করে ১নং পিআইসি গঠন করা হলে বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কার নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্টি হয় অনিহা। নাইন্দার হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে ৩টির স্থলে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে দুটি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বারাদ্ধ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১নং পিআইসি কচুদাইড় প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বাহ্যিক দৃষ্টিতে কচুদাইড় প্রকল্পে কাজের এ পর্যন্ত প্রায় শতকরা ৩০ ভাগও শেষ হয়নি।
এসব কাজের মধ্যে বাঁধের রংপুর গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় ১৫-২০ ফুট ভাঙ্গা অংশে মাটি ভরাট করা হয়েছে। স্থানিয় কৃষক দিলোয়ার মিয়া ও মোক্তাদির মিয়া জানান, বাঁধের সামান্য ভাঙ্গা অংশে মাটি ভরাট করে ভাঙ্গা অংশের উভয় দিকে ৫০-৬০ ফুট দীর্ঘ মাটি ভরাট কাজ দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যা প্রতারনার সামিল বলে তারা মন্তব্য করেন। এ ছাড়া পুরাতন বাঁধ কিছু ঘষামাজা করে বাঁধের স্লোপে বস্তায় মাটি ভরে প্রটেকশন সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাধারন লোকজনের মতে ১নং পিআইসির কোন কাজই টেকসই নয়। ভাঙ্গায় মাটি ভরাট, বাঁশের আড় বাঁধা ও বস্তা দিয়ে বাঁধের প্রটেকশন তৈরীসহ যাবতীয় কাজে সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। ভাঙ্গা অংশের স্লোপও সন্তোষজনক না হওয়ায় কৃষকরা বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন তোলেছেন। গত বৃহস্পতিবার সরজমিনে কচুদাইড় বাঁধে গেলে এমন চিত্রই ফুটে উঠে। ওইদিন পিআইসির সভাপতি আব্দুর রশীদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এলাকায় নেই বলে জানান।
এসময় বাঁধের কাজে নিয়োজিত ১৫-২০ শ্রমিকের মধ্যে কয়েকজন শ্রমিক জানান, নিয়মিত করলে ১ সপ্তার মধ্যেই সাকুল্য কাজ শেষ করা যাবে। এদিকে নাইন্দার হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ২নং পিআইসি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সুরমা নদীর শাখা মির্জা খাল, চৌধুরী খাল ও সাহেব খালের ভাঙ্গা অংশ বন্ধ ও মেরামত করণ কাজে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৪শ ৪০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাস্তা ও মাটি ভরাট কাজে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪শ ৯৪ টাকা, বাঁেশর কাজে ১ লাখ ৪১ হাজার ২শ ৮৮ টাকা, লিড, কম্পেকশন ও ঘাস লাগানো কাজে বরাদ্ধ ২ লাখ ৭ হাজার ৫শ ৮ টাকা। এ প্রকল্পে ৩টি খালের মুখে মাটি ভরাট কাজ চলছে। মির্জা খালের মুখ ভরাট হয়েছে অর্ধেক অংশ। এ প্রকল্পের কোন অংশেই ঘাস লাগানো হয়নি। মির্জা খালের মুখে বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করে রাখা হয়েছে। সময়মতো বস্তায় মাটি ভর্তি করে খালের মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান, পিআইসির সভাপতি জসিম উদ্দিন তালুকদার। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের পুরো কাজই সম্পন্ন করার কথা বলেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২নং পিআইসিতে শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ছাতক পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়ার্ক এসিষ্ট্যান্ড ফজলু মিয়া এখানের সকল বাঁধেই শতকরা ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবী করেছেন। তার দাবীর সাথে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ভানুজয় দাসের বক্তব্যের ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। ১ ও ২ নং পিআইসির কাজ সম্পর্কে ভানজয় দাস জানান, বাঁেধর কাজে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ আদায় করে নেয়া হবে। পিআইসিকে এখনো কাজের অনুপাতে বিল দেয়া যাচ্ছেনা। ফলে কাজের কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।