সিলেট ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
জয়নাল আবেদীন,মৌলভীবাজারঃঃ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কয়েকটি চা বাগানের বাগান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অথবা কোম্পানীর কোন নিয়ম পালনে ব্যতয় ঘটলে বা কর্তৃপক্ষ কোন শ্রমিকের উপর অসন্তুষ্ট হলেই শ্রমিকদেরকে ইংরেজিতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) প্রদান করা হয়। নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই অভিযোগপত্রের জবাব শ্রমিককে প্রদান করতে হয়। কিন্তু অভিযোগপত্র ইংরেজিতে থাকায় নিরক্ষর চা শ্রমিকরা ভোগান্তি ও হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। আদালতের নির্দেশনা থাকলেও মানা হচ্ছে না চা কিছু বাগানগুলো।
ভাষা আন্দোলনের ১৯৫২ সালে সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারের আত্মবলিদানে বাঙ্গালী জাতি মাতৃভাষার স্বীকৃতি অর্জন করে। তাই সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। বর্তমানে সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও মানা হচ্ছে না চা বাগানগুলোতে। উপজেলায় ডানকান ব্রাদার্স লিমিটেড কোম্পানীর পরিচলনাধীন আলীনগর চা-বাগানের একজন স্থায়ী নারী শ্রমিক অর্চনা গোয়ালা এবং শমসেরনগর চা-বাগানের শ্রমিক সবিতা রিকিয়াশনসহ চা-শ্রমিকরা প্রতিদিন ২৩ কেজি কাঁচা চা-পাতা উত্তোলনের বিনিময়ে ১০২ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন। এই দিয়েই তাদের সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানের লেখাপাড়া, চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচ নির্বাহ করতে হয়।
সবিতা, অর্চনা, দেওরাজ, স্বরসতিসহ চা বাগানের শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই আমরা চা শ্রমিকরা লেখাপাড় তেমন জানা নেই। কিন্তু এসব অভিযোগপত্রের জন্যে নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব দিতে বিভিন্ন লোকের কাছে ধর্না দিয়ে অনেক ভোগান্তি পোহানোর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব দিতে হয়। তারা আরও বলেন, শ্রমিকদের কেউ কেউ কোন মতে নাম লিখতে শিখেছে। অন্যরা টিপসহি দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তাদের সন্তানরা কিছু শিক্ষা গ্রহণ করছে। তবে ইংরেজি বুঝার মতো চা বাগান খোঁজে দু’একজন লোক পাওয়া অনেক ব্যাপার।
জানা যায়, বিটিশ আমলে সবগুলো চা বাগানে ইংরেজিতে শ্রমিকদের অভিযোগপত্র দেয়া হতো। বর্তমানে কিছু বাগান বাংলা ব্যবহার করলেও ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন চা বাগান সমূহে আদালতের নির্দেশনার পর এখনও ইংরেজিতে অভিযোগপত্র প্রদান করছেন। আদালতে নির্দেশ উপেক্ষা করে ইংরেজিতে চার্জশিট প্রদান বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট ইমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উচ্চ আদালতের সকল আদেশ অধিনস্থ আদালতসহ সর্বোচ্ছ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের প্রদত্ত আদেশের সুস্পষ্ট লংঘন বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, ইংরেজি চার্জশিটের ফলে চা শ্রমিকদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। চা বাগানে উচ্চ আদালতের এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে শমশেরনগর ও আলীনগর চা বাগান ব্যবস্থাপকদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। শ্রীমঙ্গলস্থ কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহবুবুল হাসান বলেন, কিছু চা বাগানে ইংরেজীতে অভিযোগ ও চিঠিপত্র প্রদান করছে। তবে বাংলা ভাষা চিঠি ও অভিযোগপত্র ব্যবহারে এসব বাগানে বলে হয়। আশাকরা হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু বাংলায় ব্যবহার হবে।