দিল্লিতে কাঁদছে মানবতা!

প্রকাশিত: ৮:১১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০

দিল্লিতে কাঁদছে মানবতা!

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃঃ

তিন বছরের একটি মেয়ে, স্ত্রী আর ও এক বছরের একটি ছেলে নিয়ে ছোট্ট একটি সংসার তাদের । পেশায় তিনি মুদি দোকানদার। বাবা দোকানে থেকে ফেরার সময় হলে পথ চেয়ে থাকা তাদের দুই সন্তানের নিত্য অভ্যাস ছিলো। কখন বাবা ফিরে এসে কোলে তুলে মুখে চকলেট পুরে দেবেন এই সময়ের অপেক্ষায় থাকনে তারা । কিন্তু সেই বেলা যায় কিন্তু বাবার আর ফেরা হলো না  পরদিনেও। বাব এলেন দুদিন পর বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) কজন লোকের কাঁধে চড়ে, খাটিয়ায়, সাদা কাপড়ে।

 

বাবা এভাবে এলেন কেন? কোন কথা বলেন না কেন? নাকে-সাদা ওসব কী দিয়ে ডেকে রেখেছ, ছেলেটার প্রশ্ন না থাকলেও এমন হাজারো প্রশ্ন বুক কাপিঁয়ে দিচ্ছিল স্বজনদের। কাঁপা কাঁপা স্বরেই স্বজনরা বললেন, তোমাদের বাবা মারা গেছেন। এই শেষবারের মতো এলেন। এবার গেলে আর কখনো আসবেন না তোমাদের কোলে নিতে, তোমাদের আদর করতে, বুকে জড়িয়ে নিতে।

 

প্রথম কথটা না বুঝলেও বাবা আর কখনো ফিরে আসবে না এমনটা ‍বেুঝে ডুকরে কেঁদে উঠলো মেয়েটা। এই কান্নায় যেন গাছের পাতা ঝড়ে পড়ে, ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। সান্তনা দেবেন কী, মেয়েটার কান্নার সঙ্গে যেন হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন স্বজনরাও। দাফন করতে আসা পড়শীদেরও চোখ টলমল করতে থাকে। স্বয়ং মৌলভী সাহেবও অশ্রু লুকোতে পারেন না।

 

সাম্প্রদায়িক আইন সিএএ ও এনআরসিকে ঘিরে দিল্লিতে দাঙ্গায় প্রাণ হারানো অটোরিকশাচালক মুদাসসির খানের ওই স্বজনদের এ কান্নার ছবি এখন ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেউ সে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘কাঁদে দিল্লি কাঁদে মাবনতা’। কেউ লিখেছেন, ‘এই কান্না বিশ্ববাসীর জন্য অভিশাপ’। আবার কেউ লিখেছেন, ‘এ কান্না ভারতবর্ষের’।

 

কলকাতার প্রখ্যাত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা দাঙ্গার নৃশংসতা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে এ ছবিটি ওপরে দিয়েই। শিরোনাম করেছে- ‘এ যেন ইন্ডিয়া-পাকিস্তান বর্ডার’! ‘নরক হয়ে গেল চেনা রাজধানী’।

 

ভারতীয় এ সংবাদমাধ্যম জানায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি দিল্লির জাফরাবাদে সিএএ- বিরোধীরা রাস্তা অবরোধ করে। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সিএএর পক্ষে ক্ষমতাসীন বিজেপির মদতপুষ্ট উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পাল্টা সমাবেশ শুরু করে। এরপরই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। আর এই বিক্ষোভই সহিংসতায় রূপ নেয় এবং রণক্ষেত্রে পরিণত হয় দিল্লি।

 

এমনই সংঘাত-সহিংসতার থমথমে অবস্থার মধ্যেই ২৫ ফেব্রুয়ারি নিকটস্থ মুদি দোকানে সদাই করতে যাচ্ছিলেন কর্মমপুরীর বাসিন্দা অটোচালখ মুদাসসির খান। কিন্তু উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তার মাথায় গুলি করে। তখন তাকে নিকটস্থ জিটিবি হাসপাতালে নেয়া হলেও চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন মুদাসসির খানকে।

 

মুদাসসির খানের মতোই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বাঁধানো দাঙ্গায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। এছাড়া পুলিশের সামনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-মসজিদসহ মুসলিমদের অসংখ্য বাড়িঘর ও দোকানপাটে বেছে বেছে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে যেন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিল্লি।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

আর্কাইভ

July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031