সিলেটে দর্শকশূন্য গ্যালারি

প্রকাশিত: ৫:২৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২০

সিলেটে দর্শকশূন্য গ্যালারি

 

ক্রীড়া প্রতিবেদকঃঃ

সিলেটে খেলা মানেই উত্তেজনা। হোক তা ফুটবল অথবা ক্রিকেট। হোক বিপিএল কিংবা টেস্ট ম্যাচ। সব খেলায়ই দর্শকদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় কর্তাব্যক্তিদের। তবে ব্যতিক্রম এবার। টিকেট নিয়ে হাহাকার নেই, নেই স্টেডিয়ামের প্রবেশ পথে দর্শকের লম্বা লাইন।

 

এর আগে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সিলেট পর্বেও ছিল না দর্শকদের চাপ। তবুও বিপিএলের সিলেট পর্বের ম্যাচগুলো কিছু দর্শক হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে একবারেই দর্শকশূন্য গ্যালারি। এক রকম ফাঁকা গ্যালারি নিয়েই বেলা একটায় শুরু হয়েছে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।

 

সিলেটে দর্শকশূণ্যতার জন্য প্রচার-প্রচারণার অভাবকেই দায়ী করছেন দর্শকরা। দর্শকরা বলছেন, সিলেটে মাশরাফির নেতৃত্বে ওয়ানডে ম্যাচ হচ্ছে অথচ কোন প্রচার-প্রচারণা নেই। এমনকি নেই কোন ব্যানার পোষ্টারও। সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্টরা দায়সারা ভাবে কাজ করছেন বলে মনে করেন সিলেটের ক্রিয়াপ্রেমী দর্শকরা।

 

আরিফুজ্জামান নামের এক দর্শক প্রচার-প্রচারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, যেহেতু জিম্বাবুয়ে আগে ঢাকায় এসেছে। আর সেখানেই টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। এজন্য সাধারণ দর্শকরা ধরে নিয়েছে ঢাকায় ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রচার-প্রচারণা করতে পারতেন। বিশেষ করে নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ব্যানার ফেস্টুন লাগানো যেত। এখন তো এমন হয়েছে যে, স্টেডিয়ামের ভেতরে না গেলে বুঝা যাবে না এখানে ম্যাচ হচ্ছে?

 

নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফুজ্জামান আরিফ। তিনি বলেন, দর্শক না আসার পিছনে কর্তাব্যক্তিদের ব্যর্থতাই বেশি। কারণ বেশির ভাগ মানুষেই জানেন না কোথায় টিকেট বিক্রি হবে। এজন্য মানুষ জানতেই পারে নি এ সিরিজের বিষয়ে। এছাড়াও প্রচার-প্রচারণা নেই বললেই চলে।

 

তবে সিলেটের মিডিয়া ম্যানেজার ফরহাদ কোরেশি বলেন, আগে এইখানে খেলা খুব একটা ছিলো না। এখন রেগুলার খেলা হচ্ছে। তাই মানুষের আগ্রহ কিছুটা কম। আর সিলেটের মানুষদের প্রথম ম্যাচ যাওয়ার পরে খেলা দেখার ইন্টারেস্টটা আসে।

 

আর প্রচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা টিভি চ্যানেল সংবাদমাধ্যম এবং স্থানীয়ভাবেও পেস্টুন ব্যানার এবং মাইকিং করেও প্রচারণা করা হয়েছে।

 

তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে বিপিএলে জিম্বাবুয়ের চেয়েও ভালো ভালো বাংলাদেশী প্লেয়ারদের খেলা দেখে গেছে মানুষজন। মানুষের আগ্রহ হয়ত আগের চেয়ে একটু। তবুও বিকেলের দিকে রোদ কমলে মানুষজন হয়ত আসতে শুরু করবে। ওয়ার্কিং ডে তে মানুষ সাধারণত তিনটার দিকে আসা শুরু করে ।

 

এবার ১০০ টাকা করে ধরা হয়েছে ওয়েস্টার্ন গ্যালারি ও গ্রিন হিল এরিয়ার টিকিটের দাম। ইস্টার্ন গ্যালারির টিকিট ১৫০ টাকা। ক্লাব হাউস ৩০০ টাকা। আর গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের টিকিট কিনতে গেলে খরচ পড়বে ১০০০ টাকা।

 

অথচ ২০১৪ সালের ২৯ আগস্ট সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-নেপাল অনূর্ধ্ব ২৩ দল। এদিন দেশের মানুষ দেখেছিল অন্য এক সিলেটকে। ম্যাচের দিন গ্যালারি তো বটেই, ডাগ আউট, টাচ লাইন পর্যন্ত দর্শকে ঠাসা। এতে খেলোয়াড়দের থ্রো-ইন, কর্নার কিক নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে বেশ। এতো উন্মাদনার পরও এদিন সিলেটের মানুষকে পরাজয় উপহার দেয় বাংলাদেশ ফুটবল টিম।

 

সেসময় ফুটবলের কর্তাব্যক্তিরা ঢাকার মাঠ থেকে ফুটবলকে ছড়িয়ে দেবার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। এরপর থেকেই নিয়মিত সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বয়স ভিত্তিক দল, জাতীয় দলের খেলা ও লীগ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দর্শকরাও প্রতিদিন মাঠে এসে উৎসাহ দিচ্ছেন। শুধুই কি ফুটবলে এমন উন্মাদনা। ক্রিকেটেও কি নয়?

 

সবুজ পাহাড় টিলা আর নয়নাভিরাম চা বাগানের মনোরম পরিবেশে একমাত্র গ্রিন গ্যালারির সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাড়ে ১৮ হাজার দর্শক একসাথে বসে খেলা উপভোগ করতে পারেন। ২০০৭ সালে স্টেডিয়ামটি নির্মিত হলেও ২০১৪ সালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের খেলার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে অভিষিক্ত হয় মাঠটি।

 

এরপর ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, ২০১৭ বিপিএলের ছয়টি এবং ২০১৮ সালের বিপিএলের আটটি খেলা, বাংলাদেশ-শ্রীলংকার একটি ওয়ানডে এবং বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি ম্যাচও এ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া সবকটি খেলায়ই দর্শকরা স্টেডিয়ামের গ্যালারি মাতিয়েছেন।

 

বঙ্গবন্ধু বিপিএলের আগের আসরের সিলেট পর্ব নিয়ে তো রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড হয়েছে সিলেটে। প্রথমেই সিলেটে টিকিট ছিল ‘সোনার হরিণ’। কারণ সেবার অনেকেই আগের রাত থেকেই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের বুথে হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন; যার দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটারেরও বেশি ছিল।

 

তবে চাহিদার তুলনায় টিকিটের সংখ্যা কম থাকায় ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই হাহাকার শুরু হয়েছিল। অনেকেই দীর্ঘসময় লাইনে দাড়িয়ে টিকেট না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়ছিলেন। সেই আক্ষেপ গোছাতে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। এরপর স্থানীয় পর্যায়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলেছিল বিপিএল।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

আর্কাইভ

January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031