অর্থনৈতিক সংকটে পরবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:০৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০২০

অর্থনৈতিক সংকটে পরবে বাংলাদেশ

হারুন-অর-রশিদ ও গোলাম রাব্বানীঃঃ

বিভিন্ন দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে নভেল করোনা ভাইরাস। মরণঘাতী এই ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভাইরাস চূড়ান্তভাবে আঘাত করলে বিশ্বের অর্থনীতিতে বছরে উৎপাদন কমবে ৩৪ হাজার ৬৯৭ কোটি ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৯ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।

 

এর প্রভাবে চীনের মাত্র ২ শতাংশ রপ্তানি কমলে উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশে রপ্তানি বাণিজ্য কমবে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার পর্যন্ত।করোনা সেভাবে সংক্রমণ না হলেও অর্থনৈতিকভাবে শীর্ষ ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে।

 

কাঁচামালা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় কমে যাবে শিল্পোৎপাদন। এর ফল মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। অর্থনীতির ওপর করোনার প্রভাবসম্পর্কিত জাতিসংঘের আঙ্কটাড এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) পৃথক দুটি প্রতিবেদন এই আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

 

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ধরনের ওপর অর্থনীতির ক্ষতির আনুমানিক ধারণা দিয়েছে এডিবি। বর্তমান অবস্থায় বৈশ্বিক জিডিপি কমবে দশমিক শূন্য ৮৯ শতাংশ বা ৭ হাজার ৬৬৯ কোটি ডলার।

 

মধ্যম পর্যায়ের (তিন মাস) প্রভাবে জিডিপি কমবে ১৫ হাজার ৫৯৫ কোটি ডলারের। তীব্র মাত্রার সংক্রমণে (৬ মাস) ৩৪ হাজার ৬৯৭ কোটি ডলারের জিডিপি হারাবে বিশ্ব।

 

এ ক্ষেত্রে জিডিপি কমবে দশমিক ৪০৪ শতাংশ হারে। এককভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চীনের অর্থনীতি। দেশটির অভ্যন্তরীণ ক্ষতির কারণে বৈশ্বিক পর্যটনশিল্পে ধস নামবে।

 

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে পালাউ, মালদ্বীপ ও কম্বোডিয়া। করোনা পরিস্থিতি ৬ মাসের বেশি অর্থাৎ তীব্র আকার ধারণ করলে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে ৯৪ লাখ ডলার বা ৮০ কোটি টাকা লোকসান করবে।

 

তবে ২ মাসের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকলে ক্ষতি হবে ৩১ লাখ ডলারের। অবশ্য করোনা সংক্রমণ হলে কী পরিমাণ ক্ষতি হবে তার হিসাব দেওয়া হয়নি ওই প্রতিবেদনে।

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বিমান, হোটেল, পরিবহন খাত। এসব খাতেও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ হবে ভয়াবহ।

 

এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মুন্তাকিম আশরাফ বলেন, চীনের প্রভাবে বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ কোনো মাপকাঠি দিয়ে বিচার হবে না। আর্থিক ক্ষতির চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের প্রতিযোগীরা এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, উৎপাদন পুরোপুরি ব্যাহত হচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তারা সরে আসছে। ফলে আগামীতে আরও বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।

 

এদিকে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান আঙ্কটাড প্রতিবেদনে বলেছে, চীনের কাঁচামাল ও শিল্পের মধ্যবর্তী উপকরণের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর রপ্তানি ব্যাপকহারে কমে যাবে।

 

বিভিন্ন দেশের ১৩টি খাতের রপ্তানি সরাসরি কমে যাবে। ওই খাতগুলো হচ্ছে সূক্ষ্ম ও মূলধনী যন্ত্রপাতি, অটোমোবাইল, যোগযোগকারী যন্ত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্র, রবার বা প্লাস্টিক, অফিস সরঞ্জাম, চামড়া, ধাতব দ্রব্য, কাগজ, রাসায়নিক সামগ্রী, পোশাক ও কাঠসামগ্রী।

 

কাঁচামালের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল বিশ্বের শীর্ষ ২০ ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশের চামড়া, পোশাক ও আসবাবপত্র শিল্প খাত বড় ক্ষতির মধ্যে পড়বে। এ তিন খাতের রপ্তানির অংশ মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশ।

 

চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সর্বমোট ২ হাজার ৬২৪ কোটি ডলারের পোশাক, চামড়া ও আসবাবপত্র থেকে এসেছে ২ হাজার ২৪৭ কোটি ডলার।

 

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, চীন থেকে কোনো কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। সব ধরনের শিপমেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।

 

এ জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এই সংকট পোশাকশিল্পকে ভয়াবহ বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আরও ৩-৪ মাস এই সংকট অব্যাহত থাকলে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হব আমরা।

 

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে চীনের কাঁচামাল রপ্তানি ২ শতাংশ হারে কমলে বিশ্বের ২০টি দেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হবে তার হিসাব দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চীনের রপ্তানি কমছে অনেক বেশি।

 

জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে চীনের রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। কমতির এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমবে প্রায় ১৪ কোটি ডলার বা ১ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

 

এদিকে করোনা ভাইরাসের আক্রমণের আগে থেকেই কমছে বাংলাদেশের রপ্তানি। এখন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় কাঁচামালের অভাবে অনেক কারখানা বন্ধের উপক্রম। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

 

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চীনে করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। কেননা আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এখন ২০০ কোটি টাকার পণ্য নিচ্ছে না চীন। আর দেশটির সঙ্গে ব্যবসা থাকায় সরাসরি বাংলাদেশ থেকেও পণ্য নিতে চাচ্ছে না অন্য দেশ।

 

সূত্র:আমাদের সময়

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

আর্কাইভ

April 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930