সিলেট ২রা এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৫৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২৩
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃঃ
গ্রিসের উত্তরে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৭ জনে দাঁড়িয়েছে, দেশটির এক সরকারি কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছে। তদন্তে নিযুক্ত এলেনি জাগেলিডু বলেন ৫৭ জনের শরীর থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য রেল শ্রমিকরা সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করে বৃহস্পতিবার একদিনের রেল ধর্মঘট পালন করেন। খবর বিবিসি। এথেন্সে টানা ২য় দিন প্রতিবাদে নেমে আসেন দুই হাজারের উপর মানুষ। সরকারের একজন মন্ত্রী জানান ২০০০ সালের দিকে গ্রিস যে অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্যে পড়ে সে সময় নেয়া কৃচ্ছ্বতাসাধন নীতির কারণেই ট্রেনে বিনিয়োগ করা যাচ্ছিল না।
এর আগে লারিসা শহরের কাছে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস মন্তব্য করেন মানুষের ভুলই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তার এ মন্তব্য বিক্ষোভকারীদের আরও উস্কে দেয়। এরইমধ্যে স্থানীয় স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে মানুষ হত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দেশটির পরিবহন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার রাতে সাড়ে তিনশো যাত্রীবাহী একটি ট্রেনের সঙ্গে একটি মালবাহী ট্রেনের এই সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনটির প্রথম দুটি বগিতে আগুন ধরে গিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর। গ্রিসের উত্তরাঞ্চলীয় শহর লারিসায় এই দুর্ঘটনার পর উদ্ধার-কর্মীরা সেখানে সারা রাত ধরে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন। দুটো ট্রেন কী করে একই লাইনে আসলো তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ঐ সময় সংকেতের দায়িত্বে থাকা স্টেশনমাস্টার কোন ভুল করেননি দাবি করে বলছেন কোন কারিগরি ত্রুটি থেকে দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সবকিছু ‘একটি মানবিক ত্রুটিকেই’ নির্দেশ করছে। দুঃস্বপ্নের দশ সেকেন্ড ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে জীবন বাঁচিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী স্টারজিওস মিনেনিস। “আমরা একটা বিকট শব্দ শুনতে পাই” বলছিলেন তিনি। “ট্রেনের কামরার মধ্যে আমরা গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম। তারপর এটি গড়িয়ে একদিকে থামলো, তারপর সবার মধ্যে আতংক সৃষ্টি হলো। চারিদিকে তার ঝুলছে, আগুন। সাথে সাথেই আগুন ধরে গিয়েছিল। আমরা আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলাম।” ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি রয়টার্সকে বলেন, “দশ-পনের সেকেন্ড ধরে চরম বিশৃঙ্খলা চলেছে। একজন আরেকজনের ওপর গিয়ে পড়ছে, উপর থেকে তার ঝুলছে, চারিদিকে ভাঙ্গা জানালা, লোকজন চিৎকার করছে।
যাত্রীরা জানিয়েছেন, ট্রেন থেকে বেরুনোর জন্য তাদেরকে জানালার কাঁচ ভাঙ্গতে হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। কোন প্রাথমিক ধারণা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রিসে এটিকে দেশটির ইতিহাসের ভয়ংকরতম দুর্ঘটনা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। দেড়শোর বেশি দমকল কর্মী এবং ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করছিল। আঞ্চলিক গভর্নর কোস্টাস আগোরাস্টস জানিয়েছেন, দুই ট্রেনের মধ্যে এই সংঘর্ষ ছিল বেশ তীব্র। “এটি এক ভয়ংকর রাত, এই দৃশ্য বর্ণনা করা কঠিন”- রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলছিলেন তিনি। তিনি জানান, যাত্রীবাহী ট্রেনটির প্রথম চারটি বগি লাইনচ্যূত হয়, এবং প্রথম দুটি বগিতে আগুন ধরে যায়। “ট্রেন দুটি বেশ উচ্চ গতিতে চলছিল, এবং ড্রাইভার জানতো না যে বিপরীত দিক থেকে আরেকটি ট্রেন আসছে”, বলছেন তিনি। “আমি আমার পুরো জীবনে এরকম ঘটনা দেখিনি। খুবই মর্মান্তিক দৃশ্য।
পাঁচ ঘণ্টা পরেও আমরা এখানে মৃতদেহ খুঁজে পাচ্ছি”, পরিশ্রান্ত এক উদ্ধারকর্মী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলছিলেন। এই দুর্ঘটনার পর গ্রিসে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিটসোটাকিস দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরকম দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটলো, তা খুঁজে বের করা এবং এমন যাতে আর না ঘটে তার ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।