সিলেট ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩
প্রতিনিধি/ধর্মপাশাঃঃ
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাকেশ চন্দ্র পালের গাফিলতিতে ওই বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষক জহুরা খাতুন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পদক বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ভূক্তভোগী ওই সহকারি শিক্ষক সুবিচার চেয়ে রাকেশ চন্দ্র পালের বিরুদ্ধে সোমবার (৪সেপ্টেম্বর)সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (৩সেপ্টম্বর) সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনওর) কার্যালয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩ইং এর বাছাইয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাক্ষাতকার অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির শ্রেষ্ঠ সভাপতি, শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা, শ্রেষ্ঠ সহকারি শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠ সহকারি শিক্ষিকা নির্বাচিত করা হয়। ইউএনর কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে ভূক্তভোগী ওই সহকারি শিক্ষক উল্লেখ করেছেন,তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৪বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। ২০১৯ ও ২০২২সালে তিনি উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারি শিক্ষিকা নির্বাচিত হন। করোনাকালীন সময়ে ধর্মপাশা অনলাইন স্কুল ও সরকার কর্তৃক ঘরে বসে শিখি ফেসবুক ফেইজ খুলে তিনি প্রতিদিন লাইভ ক্লাস, গুগল মিটে শিক্ষার্থীদের পড়া দেওয়া ও আদায় করা এবং জুম অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানউন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁকে করোনা যোদ্ধা শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতিস্বরূপ সনদপত্র প্রদান করেন।
সহকারি শিক্ষক জহুরা খাতুন বলেন, আমি উপজেলা পর্যায়ে দুইবার শ্রেষ্ঠ সহকারি শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রাকেশ চন্দ্র পাল স্যার আমার সৃজনশীল কাজে উৎসাহ না দিয়ে অদৃশ্য কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আমার ওপর অনেতিবাচক মনোভাব পোষন করে আসছেন। তাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পদক বাছাই প্রক্রিয়ার বিষয়টি তিনি আমাকে অবগত করেননি। এ অবস্থায় এই প্রতিযোগিতায় আমি অংশ নিতে পারিনি। প্রতিযোগিতায় আমি অংশ নিতে পারলে উপজেলা,জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সহকারি শিক্ষিকা নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করা সম্ভব হতো বলে আমার বিশ্বাস। প্রধান শিক্ষক স্যার উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে এই প্রতিযোগিতা থেকে বঞ্চিত করেছেন। এ নিয়ে আমি ইউএনও স্যারের কাছে সোমবার লিখিত অভিযোগ করেছি।
কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাকেশ চন্দ্র পাল বলেন, ফরম পূরণ করে আমাদের বিদ্যালয় থেকে সহকারি শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষিকার তালিকা সহকারি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা বা চিঠি আমি পাইনি। সহকারি শিক্ষকদের বিষয়টি জানাতে হবে এ ধরণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অনেক আগে থেকে শিক্ষকেরা স্বেচ্ছায় প্রাথমিক শিক্ষা পদক বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে আসছেন।
ধর্মপাশা সদর ক্লাস্টারের উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা পদক বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ঠ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত ফরম পূরণ করে একজন সহকারি শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষিকার তালিকা আমার কাছে জমা দেওয়া কথা থাকলেও উপজেলার কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য কোনো তালিকা আমি পাইনি। সহকারি শিক্ষকদের বিষয়টি অবগত করার জন্য ওই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষককে নানাভাবে আমি অবগত করেছি। তিনি না জানিয়ে থাকলে কাজটি সঠিক করেননি।
ধর্মপাশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মানবেন্দ্র দাস বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি।