সিলেট ২৮শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২০
লন্ডনবাংলা ডেস্কঃঃ
চীনে মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। চীনে মৃত্যুর সংখা প্রায় শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। ভাইরাসটি ইতিমধ্যে আরো বেশ কয়েকেটি দেশেও ছড়িয়ে পরছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা গেছে।চীনে সাধারণ মানুষ করোনো ভাইরাস নিয়ে রয়েছেন আতংকে।
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার শবনম জেবি দোলা। বর্তমানে তিনি চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন। তার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দোলাসহ সকল শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখার সবধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে। হোজোউ সিটির সাথে অন্য শহরগুলোর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দোলাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকসহ সব ফটক বন্ধ রয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরিতে প্রায় বন্দি অবস্থায় আছেন দোলাসহ সকল শিক্ষার্থীরা। সবাইকে ডরমিটরির (আবাসিক হল) বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদেরও ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই তাদের খাবার সরবরাহ করছে। অন্যান্য চাহিদাও তারা মেটাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দোলা। এ দিকে, গত বুধবার দোলা একটি ভিডি ক্লিপের মাধ্যমে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বলেন, এই মুহূর্তে দেশে ফিরে দেশকে বিপদে ফেলবেন না।
জানা গেছে, শবনম জেবি দোলার বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। তিনি চীনের হোজোউ শহরের হোজোউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত বুধবার ফেসবুক লাইভে এসে তিনি চীনে অবস্থানকারী বাংলাদেশদির প্রতি এ আহ্বান জানান। শবনম জেবি সিলেটের নাট্যসংগঠন একদল ফিনিক্স\’র সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে আতঙ্কে রয়েছেন চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। এদের অনেকেই দেশে ফিরতে চাচ্ছেন।
এ অবস্থায় গত বুধবার ফেসবুক লাইভে এসে শবনম জেবি বলেন, আমি জেনেছি চায়নায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অনেকে দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ টিকিটও কিনে ফেলেছেন। তবে সবার প্রতি অনুরোধ, এই মুহূর্তে দেশে ফিরবেন না। এখানেই থাকুন। এখানে ভালো চিকিৎসা পাবেন।আপাতত দেশে গিয়ে দেশকে ও নিজের পরিবারকে বিপদে ফেলবেন না। যারা দেশে যেতে চাচ্ছেন তাদের দ্বিতীয়বার ভাবার অনুরোধ জানান জেবি। লাইভের শুরুতে শবনম বলেন, চায়নার বর্তমান পরিস্থিতি কি সবাই জানেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সুরক্ষিত রাথার সবধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে। হোজোউ সিটির সাথে অন্য শহরগুলোর যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকসহ সব ফটক বন্ধ। গত তিনদিন ধরে আমরা ডরমিটরিতে প্রায় বন্দি অবস্থায় আছি। কেউ ডরমিটরির বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদেরও ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই আমাদের খাবার দিচ্ছে। অন্যান্য চাহিদাও তারা মেটাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি যারা চায়নাতে আছেন, যারা বাংলাদেশে যেতে চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যেই কথাগুলো বলা, তবে কারো সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করা আমার উদ্দেশ্য হয়।
চীনে মহামারি আকার ধারণ করা এই ভাইরাস সম্পর্কে শবনম বলেন, এই ভাইরাসটি মানুষের হাঁচি থেকে ছড়াচ্ছে। কেউ আক্রান্ত একজনের পাশে গেলেও আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। আর এর লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লুর মতো। এই লক্ষণগুলো ধরা পড়তে ৭ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। ফলে আমার শরীরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার আগেই আমি অন্যদের আক্রান্ত করে ফেলতে পারি।
শবনম বলেন, অনেকেই দেখছি দেশে যেতে চাচ্ছেন। অনেকে দেখলাম টিকিটও কিনে ফেলছেন। আমরা কিন্তু না বুঝে নিজের দেশকে, নিজের পরিবার, আত্মীয় স্বজনদের বিপদে ফেলছি। কারণ হচ্ছে- আমি জানি আমি এই মুহূর্তে সুস্থ আছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। কিন্তু যাওয়ার সময় বাসে বা বিমানেও যদি একজন আক্রান্ত মানুষ থাকেন, তার মাধ্যমেও আমি আক্রান্ত হতে পারি। আবার আক্রান্ত হওয়ার পর আমি কিন্তু সাথে সাথে তা বুঝতে পারছি না। …আজকে আমি গেলাম আবার পরিবারে, তখন পরিবারের সবাই কিন্তু আমাকে আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবে। কোলাকুলি করবে। এতে এই ভাইরাস আমি আমার পরিবারে ছড়িয়ে দিতে পারি।
তিনি বলেন, আমরা যদি ১০০জন মানুষ দেশে যাই, এরমধ্যে যদি ৩/৪জন মানুষ আক্রান্ত হন, তাহলেই কিন্তু দেশে অনেক বড় বিপর্যয় নিয়েআসতে পারে। আমাদের দেশের জন্য, পরিবারের জন্য বিপদ নিয়ে আসবো।
তিনি বলেন, আমারও কিন্তু ভয় হচ্ছে। আমারও প্রতিদিন মনে হচ্ছে বাংলাদেশে চলে যাই। পরিবারের সাথে থাকি। কিন্তু ভাবতে হবে, আমরা যে মানুষগুলোকে ভালোবাসি, আমাদের পরিবার বাবা-মা বন্ধুবান্ধব, নিজের অজান্তেই কিন্তু নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সর্বোপরি নিজের দেশকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারি। চীন চেষ্টা করছে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করতে। আক্রান্ত হলে এখানে উন্নত চিকিৎসা পাবো। কিন্তু বাংলাদেশে যাওয়ার সময় যদি আক্রান্ত হই। তবে দেশের মানুষকে আক্রান্ত করবো। তারা উন্নত চিকিৎসাও পাবো না।
শবনম বলেন, আমি নিজেও খুব ভয় পাচ্ছি। তবু সাহস নিয়ে থাকার চেষ্টা করছি। আজকে এখানে আমি বিপদে আছি। সেটা বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়েও আসতে পারতো। তাই সবার প্রতি অনুরোধ, সাহস নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। যে ভালোবাসার মানুষের জন্য দেশে যেতে চাচ্ছেন তাদের বিপদে ফেলে দেবেন না। দেশকে বিপদে ফেলবেন না।