মুক্তিযোদ্ধার প্রভাব খাটিয়ে ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৪:৩১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০

মুক্তিযোদ্ধার প্রভাব খাটিয়ে ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ
Spread the love

৯৯ Views

 

স্টাফ রির্পোটারঃঃ

সিলেটের ওসমানীনগরে মুক্তিযোদ্ধার প্রভাব খাটিয়ে ছোঁট ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাতে অভিযোগ উঠেছে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে। উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের চরইসবপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে এ নিয়ে তাদের মধ্যে দির্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ ঘটনায় বড় ভাইকে অভিযুক্ত করে সিলেট পুলিশ সুপার বরাবর রিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ছোট ভাই পুলিন্দ্র মজুমদার কাজল। নিজের সম্পত্তিও নিরাপত্তা চেয়ে ছোট ভাই সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি।

 

বুধবার বিকালে জেলা প্রেসক্লাবে লিখত বক্তব্যে পুলিন্দ্র মজুমদার কাজল বলেন, তিনি বিগত ৩৫ বছর ধরে ওমানে বসবাস করছেন। প্রবাসে যাওয়ার পর কষ্টার্জিত প্রায় কয়েক কোটি টাকা তার বড় ভাই পবিত্র মজুমদারের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে পাঠান। সে টাকা দিয়ে পবিত্র মজুমদার জায়গা সম্পত্তি ক্রয় করেন এবং বাড়িতে পাকা ঘর নির্মান করেন। প্রবাসে থাকাবস্থায় পুলিন্দ্র মজুমদারের বড় ভাই ও মেঝো ভাইয়ের সন্তানদের লেখাপড়া, ভরণ পোষণে সম্পুর্ন ব্যয়ভার বহন করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, তিনি প্রবাসে থাকাকালে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন তার পাঠানো টাকা দিয়ে পবিত্র মজুমদারও তার স্ত্রীসহ নামে-বেনামে জায়গা ক্রয় করেছেন। এমনকি পৈত্রিক সম্পত্তির জটিলতা নিরসনে প্রবাসে থাকাকালে পবিত্র মজুমদার তার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে কয়েক ধফায় কয়েক লক্ষ টাকা আনলেও জটিলতা নিরসন না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া জায়গা বিক্রি করার কথা বলে তার মেঝো ভাই মনিন্দ্র মজুমদারও তার কাছ থেকে আড়াই লক্ষ নিয়ে ওই জায়গার দখল দিলেও এখন পর্যন্ত তিনি সেই জায়গা রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেনে তিনি।

 

পুলিন্দ্র মজুমদার বলেন, সম্প্রতি আমি দেশে আসলে বড় ভাই পবিত্র মজুমদার, মেঝো ভাই মনিন্দ্র মজুমদারসহ তাদের সন্তানরা আমার কাছে বিভিন্ন ভাবে কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি টাকা দিতে অপারকতা দেখিয়ে আমার বড় ভাইর নিকট বিদেশ থেকে আমার পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে তিনি আমাকে টাকার হিসাব না দিয়ে বলেন- আমি কোনো টাকার হিসাব দেবনা, আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি সব করতে পারি, আমার সাথে বেশি বাড়াবাড়ি করতে এসো না। আমি বাড়িতে আসার পর দেখতে পাই বাড়িতে আমার অংশের জায়গা এবং গোয়ালাবাজার সংলগ্ন গ্রামতলায় আমার ক্রয়করা বাড়ি থেকে কয়েক লক্ষ টাকার গাছ জোর পূর্বক কেটে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করেছেন তারা। এনিয়ে প্রতিবাদ করলে আমার বড় ভাই পবিত্র মজুমদার, উনার পুত্র পংকজ কান্তি মজুমদার কৃষ্ণ, মেঝো ভাই মনিন্দ্র মজুমদার সংঘবদ্ধভাবে আমাকে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। জানমালের নিরাপত্ত্বার কথা চিন্তা করে আমি সিলেট শহরে ভাড়াটে বাসায় উঠি। বাড়ি থেকে হুমকি দিয়ে বের করে দেয়ার ঘটনায় আমি গ্রামের মুরব্বীয়ান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানাই। তখন ইউনিয়নের সাবেক একজন জনপ্রতিনিধি আমাকে বলেন-যেহেতু আমার টাকা-পয়সা আছে তাই আমার বিষয় সম্পত্তি সব কিছু বুঝিয়া পাইতে ভাই-ভাতিজাকে অনুদান হিসাবে কিছু টাকা দেয়ার জন্য। আমি উনার কাছে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকার চেক প্রদান করি। কিন্তু আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা খেতাবের প্রভাব কাটিয়ে ওই সাবেক জনপ্রতিনিধির কথাও রাখেননি।

 

গত বছরের ৯ অক্টোবর তারিখে আমি সিলেটের বাসা থেকে রাত ১২টার দিকে গ্রামের বাড়িতে গেলে তারা আমাকে ঘরে ঢুকতে না দিয়ে ভবিষ্যতে বাড়িতে আসলে প্রাণণাশের হুমকি দিলে আমার কাকাতো ভাই মহেন্দ্র মজুমদারের বাড়িতে গিয়ে রাত্রী যাপন করে পরদিন চলে আসি। তাদের অব্যাহত হুমকিতে আমি জানমালের নিরাপত্ত্বায় ভুগছি। এসব ঘটনায় আমি ওসমানীনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি, ডায়েরি নং-৭৪৫। আমার বড় ভাই চলচাতুরী করে বিষয় সম্পত্তি আত্মসাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে তার ছেলে পংকজ কান্তি মজুমদারের জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা হিসেবে আমার নাম পুলিন্দ্র মজুমদার ও মাতা হিসেবে আমার স্ত্রী পার্বতী মজুমদারের নাম লিপিবদ্ধ করান। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নং-৯১১১৯৪৭৭১৫১৪, জন্ম তারিখ ০৮.০৯.১৯৮৯ইং।

 

ফের গত ২৩ ডিসেম্বর আমার ভাই প্রবিত্র মজুমদার ও মনিন্দ্র মজুমদারসহ তাদের ছেলেরা হঠাৎ সিলেট বাসায় অবস্থান করে আমার কাছে দেড় লক্ষ টাকা দাবি করলে আমি টাকা দিতে অনিহা প্রকাশ করি। এসময় তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাসা থেকে চলে আসে। পরের দিন আমি জরুরী কাজে গ্রামের বাড়িতে আসলে দেখি আমার ভাই ভাতিজারা আমার মালিকাধীন পুকুরের মাছ লুটপাট করছেন। এসময় আমি তাঁদেরকে বাঁধা দিলে তারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে দেশী অস্ত্র নিয়ে আমার উপর হামলা ও মারধর করে। আমাকে রক্ষা করতে আমার পাশের ঘরের কাকাতো ভাই সুরেন্দ্র মজুমদার, মাহেন্দ্র মজুমদার ও তাদের ছেলেরা এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা চালিয়ে আহত করা হয়। এই ঘটনায় আমি থানায় গিয়ে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরবর্তীতে থানা পুলিশের কথা মতো লিখিত অভিযোগ দিলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তা আমলে নেয়নি। এই ঘটনাটি আড়াল করতে আমার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধার ক্ষমতা দেখিয়ে উল্টো আমার নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে থানা পুলিশসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে হয়রানি করে আসছে। তাদের ভয়ে আমি পরিবার রেখে প্রবাসী যেতেও ভয় পাচ্ছি।

 

আমার ভাই-ভাতিজাদের এরুপ কর্মকান্ডের বিষয়ে গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিগণ বিষয়টি সমাধানে তারা বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গ্রামের ২৮ জন ব্যক্তি স্বাক্ষরিত লিখিত একটি অঙ্গীকারমূলক স্মরণলিপি সম্পাদন করেন। তাতে বলা হয়েছে- আমার বড় ভাইয়ের ছেলে কৃষ্ণ মজুমদার এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলার বিঘœ ঘটায় তার চালচলন খুবই খারাপ। সে মাদকসেবি, নেশাগ্রস্থ, ধর্ষণ মামলার আসামী ছিল এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। তাই আমি আইনের সহযোগিতা নিলে তারা আমাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করবেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে- ওসমানীনগরের চরইসবপুর গ্রামের মন্টু মিয়া, লাল মিয়া, মনোহর আলী, সুধিপ মজুমদার, লাল মিয়া, মন্টু মিয়া, ইশ্বাদ আলী, অজয় পাল, মিঠু পাল,নজির মিয়া, শরিন্দ্র মজুমদার, ওয়ারিছ আলী, আতাউর রহমান আতাফুল, ঈছরাদ আলী, চয়ন পাল, মাহিন্দ্র মজুমদার, আব্দুনূর, অরুণ পাল, মিঠু মজুমদারসহ পুলিন্দ্র মজুমদারের পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় প্রায় ২০জন উপস্থিত ছিলেন।


Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Follow us

আর্কাইভ

March 2023
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031