সিলেট ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৫১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০
মিজানুর রহমান রুমান, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শিমুল বাগানে গত বছর মাঘ মাসে ফুল ফুটলেও এবার শিমুল ফুল ফুটেছে বসন্তেই। রক্তরাঙ্গা শিমুল ফুলে ছেয়ে গেছে যাদুকাটা নদী তীরের জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে। গত বছর নির্ধারিত সময়ের ছেয়ে একটু আগে ফুল ফুটলেও এবার তার আপন মহিমায় ফুল ফুটেছে নির্ধারিত সময়েই। ডালে ডালে ফুটে থাকা হাজারো ফুল পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। শিমুল বাগানের রক্তরাঙ্গা ফুল চোখে পড়ছে এবার অনেক দূর থেকেই।
ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে দেশের সবছেয়ে বড় শিমুল বাগান। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক প্রেমিরা জড়ো হচ্ছেন শিমুল বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে প্রতিনিয়ত হাজারো লোকের যাতায়াত ঘটছে এ বাগানটিতে। এ যেন দিন দিন হাজারো পর্যটকদের মিলন মেলায় পরিণত হচ্ছে।
গতকাল রবিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিমুল বাগানে সারি সারি ফুটে থাকা লাল পাপড়ি দেখে আগত পর্যটকদের মনে আনন্দের ঢেউ উঠেছে। মায়াময় শিমুল বাগানে জমে উঠেছে শিমুল মায়ার খেলা। গাছেল মধ্যে লাল ফুলের গালিচা দেখতে অসংখ্য পর্যটক প্রতিনিয়ত আসছেন শিমুল বাগানে।
আগত পর্যটকদের মাঝে কেউ কেউ শিমুল ফুল দিয়ে সাজানো ভালবাসার পথিকৃৎ এ ছবি উঠছেন একসাথে। কেউবা শিমুল ফুল দিয়ে নিজের মত করে করছেন নানা কারুকাজ। এবার ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই গাছে গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী মানিগাঁও গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘা জমি জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল এক শিমুল বাগান। নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে মায়ার নদী যাদুকাটা আর এপারে রক্তিম ফুলের সমারোহ।
২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃক্ষ প্রেমি জয়নাল আবেদীন নিজের প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে সৌখিনতার বসে প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে শিমুল বাগান। বসন্তে শিমুল গাছগুলোতে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। ফাগুনের অরুণ আলোয় ফুটেছে বাগানের শিমুল ফুলগুলো।
চোখের তৃষ্ণা মেটাতে টাঙ্গুয়ার হাওর, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে ও রূপের নদী যাদুকাটার মধ্য স্থলে বিশাল শিমুল বাগানে ফুটে ওঠা টুকটুকে লাল শিমুল ফুলগুলো দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন হাজারো পর্যটক। সিলেট থেকে বাগান দেখতে আসা ফাহিম রেজা ও মেহজাবিন জানান, দেশে এতো বড় শিমুল বাগান তারা এর আগে দেখেননি। তারা সঠিক সময়ে ফুলের পাপড়ি দেখতে পেয়ে তাদের মণ আনন্দে ভরে গেছে।
তারা বলেন, এখানকার রাস্তাঘাট উন্নত হলে এখানে আসা পর্যটকদের কষ্ট একটু কম হবে এবং পর্যটক প্রেমিদের সমাগম আরো বাড়বে। বাগানের মালিক প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের ছেলে রাখাব উদ্দিন জানান, এবারই সঠিক সময়ে বসন্তে শিমুল গাছগুলোতে এক সঙ্গে ফুল ফুটেছে। এই শিমুল বাগান তার মরহুম পিতার পরিচয় দিন দিন আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানে আসা পর্যটকদের সুবিধার জন্য একটি শিমুল বাগান কেন্টিন ও হোটেল করা হয়েছে। কিভাবে যাবেন : শিমুল বাগান দেখতে চাইলে প্রথমে ঢাকা সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস যোগে সুনামগঞ্জের প্রবেশদ্বার আবদুজ জহুর সেতুতে নামতে হবে। আপনি ইচ্ছে করলে মহাখালী থেকেও বাসে আসতে পারবেন সুনামগঞ্জে।
এসব বাসে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৫শ টাকা। আর যারা সিলেট থেকে আসবেন তারা সিলেট কুমারখালী বাসষ্টেন থেকে সহজে বাসে সুনামগঞ্জ বাসষ্টেনে নেমে পড়বেন। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ১শ টাকা। আবদুজ জহুর সেতু থেকে সিএনজি, মোটরসাইকেল কিংবা যেকোনো গাড়ি দিয়ে তাহিরপুর লাউড়ের গড় বাজার অথবা বিন্নাকুলী বাজারে এসে নামবেন।
যদি সেতু থেকে মোটর সাইকেলে আসেন জনপ্রতি ভাড়া নিবে দেড়শ টাকা আর সিনজি দিয়ে আসলে ভাড়া নিবে ১শ টাকা করে। বিন্নাকুলী অথবা লাউড়েরগড় বাজার থেকে যাদুকাটা নদী পার হয়ে পায়ে হেটে অথবা অটোরিক্সা দিয়ে সুজা শিমুল বাগানে চলে আসতে পারবেন। অটোরিক্সার ভাড়া নিবে জনপ্রতি ১০টাকা করে।