সিলেট ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:২৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২০
বিজয় রায়, সুনামগঞ্জঃঃ
ছাতকে বোরো ফসল রক্ষায় নির্মিত বাঁধ নিয়ে গত বছরের ন্যায় এবছরও প্রশাসনের তোপের মুখে পড়েছেন পিআইসি ১ এর সভাপতি আব্দুর রশিদ। এ প্রকল্পের আওতাধিন বাঁধ নির্মাণ কাজে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বাঁধর পূর্নাঙ্গ কাজ তিন দিনের মধ্যে সমাপ্ত করার নির্দেশও দেয়া হয় তাকে। অন্যতায় পিআইসি ১ এর দায়িত্বশীলদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে হুশিয়ার করে দেয়া হয়। জানা যায়, নোয়ারাই ইউনিয়নের নাইন্দার হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে দুটি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বারাদ্ধ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১নং পিআইসির আওতায় কচুদাইড় প্রকল্পে ১০৬ মিটার বাঁধের ভাঙ্গা অংশ বন্ধকরন ও বাঁধ মেরামত কাজে সরকারী ৬ লাখ ২৯ হাজার ৯৮২ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২নং পিআইসির আওতায় সুরমা নদীর শাখা মির্জা খাল, চৌধুরী খাল ও সাহেব খালের ভাঙ্গা অংশ বন্ধ ও মেরামতকরণ কাজে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৪শ ৪০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বঁাঁধের ৮৩ মিটারের মধ্যে রাস্তা ও মাটি ভরাট কাজে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪শ ৯৪ টাকা, বাঁেশর কাজে ১ লাখ ৪১ হাজার ২শ ৮৮ টাকা, লিড, কম্পেকশন ও ঘাস লাগানো কাজে বরাদ্ধ ২ লাখ ৭ হাজার ৫শ ৮ টাকা। সিডিউল অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারী বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখানের কয়েকটি বাঁধের কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়েছে। ১৩ মার্চ বাঁধ পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাঁধ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম কবির এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ছাতকের উপ সহকারী প্রকৌশলী খালিছ হাসান।
১ নং পিআইসির আওতাধিন কঁচুদাইড় বাঁধ পরিদর্শন করে কর্মকর্তারা অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নির্মাণ কাজের শেষের দিকে ১নং পিআইসির আওতাধিন কঁচুদাইড় বাঁধ সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন বাঁধ ঘষামাজা ও আংশিক সংস্কারের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত বছরে নির্মিত বাঁধ প্রায় অক্ষত অবস্থায় থাকায় চলতি বছরে এখানের পিআইসি-১ এ পুরাতন বাঁধ সংস্কারের নামে সরকার প্রদেয় অর্থ লুটপাটের চেষ্টা চলছিল। পুরাতন বাঁধে উল্লেখযোগ্য কোন কাজ না করায় এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত কৃষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছিল। বাঁধ নির্মাণ কাজের মধ্যে রংপুর গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় ১৫-২০ ফুট ভাঙ্গা অংশে মাটি ভরাট করা হয়েছে। স্থানিয় একাধিক কৃষক জানান, বাঁধের সামান্য ভাঙ্গা অংশে মাটি ভরাট করে ভাঙ্গা অংশের উভয় দিকে ৫০-৬০ ফুট দীর্ঘ মাটি ভরাট কাজ দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ১নং পিআইসির বিতর্কিত সদস্য সচিব আব্দুর রশিদকে চলতি বছর পিআইসিতে সভাপতি করায় বাঁধের সুষ্ট কাজ নিয়ে আগেই আশংকা করছিল এলাকার কৃষকরা। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারী এ হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান ও সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খান। উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের নাইন্দার হাওরের ১নং পিআইসি কর্তৃক নির্মাণাধিন বাঁধ পরিদর্শনকালে বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনিয়ম ও ত্রুটির কথা উল্লেখ করেন ডিআইজি। বাঁধের কাজে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে পিআইসির কাছ থেকে সঠিক কাজ আদায় করে নেয়ার জন্য দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন উপ সহকারী প্রকৌশলী ভানুজয় দাসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাঁধ নির্মাণ কাজে দূর্নীতির কারনে গত বছরের ন্যায় এ বছরও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে পিআইসির সভাপতি আব্দুর রশিদ।
চলতি বছরে অক্ষত বাঁধ ঘষা-মাজা করেই সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্ত লুটপাটের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দেন বাঁধ মনিটরিং কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কবির। এদিকে কঠোর নির্দেশনা থাকার পরও বাঁধের পূর্নাঙ্গ কাজ হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। শনিবার ১নং পিআইসি ও ২ নং পিআইসির আওতাধিন বাঁধগুলো পরিদর্শন করে জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের এনামুল হক ও সায়েস্থা মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পিআইসি ১ এর সভাপতি আব্দুর রশিদ এ ব্যাপারে জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী বাঁধের কাজ প্রায় শেষ করা হয়েছে। আরো একদিন কাজ করা হলে তা শেষ হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী খালিছ হাসান জানান, ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশের পর কঁচুদাইড় বাঁধে মাটির কাজ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ঘাষ লাগানোর কাজ করার কথা রয়েছে।