বাংলাদেশী খাবার চিঁড়া নিয়ে সরগরম ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া

প্রকাশিত: ৯:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২০

বাংলাদেশী খাবার চিঁড়া নিয়ে সরগরম ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া
Spread the love

৪৮৫ Views

 

লন্ডনবাংলা ডেস্কঃ

 

 

চিঁড়া হচ্ছে বাংলাদেশের একধরনের খাবার যা পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপালের লোকজন খেতে পছন্দ করেন। চিড়া শুকনো বা ভেজা অবস্থায় খাওয়া যায়।  শুকনো চিড়া গুড়ের পাটালি দিয়ে খাওয়ার রীতি বাংলাদেশের প্রায় প্রতি অঞ্চলে পরিচিত খাবার। শহর থেকে গ্রামের প্রতিটি মিষ্টির দোকান গুলোতে দই চিড়া  বহুল প্রচলিতিএকটি খাবার।  বাংলাদেশেী খাবার চিঁড়া (ভারতীয় ভাষায় পোহা) খাওয়া নিয়ে মন্তব্য করায় বেকাদায় পড়েছেন দেশটির জাতীয়তাবাদী শাসকদল বিজেপির এক মন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সামাজিক মাধ্যম সরগরম হতে দেখা যাচ্ছে। কারণ,ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসকদল বিজেপির এক মন্ত্রী কয়েকজন শ্রমিকের চিঁড়া খাওয়া দেখে শ্রমিকদের পরিচয় বাংলাদেশি হিসাবে সনাক্ত করায় ভাতিীয় স্যোশাল মিডিয়ার এ জড় উঠেছে।

 

চিঁড়া খাওয়া নিয়ে মন্তব্যকারী কৈলাশ বিজয়বর্গীয় নামে এই নেতা বলেছিলেন, তার বাড়িতে কাজ করতে আসা কয়েকজন শ্রমিককে তিনি ‘বাংলাদেশি’ বলে চিনে ফেলেছেন, কারণ তারা ‘পোহা’ (চিঁড়া) খাচ্ছিলো। বিজেপি নেতার এমন মন্তব্যের পরই সরগরম হয়ে ওঠে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া। তবে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হওয়ায় মি, বিজয়বর্গীয় এখন বলছেন, যে তার মন্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে  বিজেপির এই নেতার  বাড়িতে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে কেউ বাংলাদেশি ছিলেন কী না, নাকি তিনি সেটা অন্য কোনও কারণে বলেছেন, সেটা খুঁজে বের করতে কাজে নেমে পড়েছে ভারতের  মধ্য প্রদেশের কংগ্রেস সরকার

অনেকেই ব্যঙ্গ করে বলতে শুরু করেছেন, চিঁড়ে যে শুধু বাংলাদেশিরাই নন ভারতের নানা অংশের লোকেরাও খান – এই তথ্য তো মি. বিজয়বর্গীয়র অজানা থাকার কথা নয়।কারণ তিনি যে অঞ্চলের মানুষ, বিশেষ করে তার জন্ম এবং রাজনীতির শুরু যেখানে মধ্যপ্রদেশের সেই ইন্দোর শহরে চিড়া দিয়ে তৈরি ‘পোহা’কে একরকম জাতীয় খাদ্যই হিসাবে চিড়ার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। টুইটারে স্বপ্না মদন নামে একজন লিখেছেন, “আমি পাঞ্জাবী, আমি এখন পোহা (চিড়া) খাচ্ছি, এর সাথে বাংলাদেশের কোন সম্পর্ক নেই। “অনেকেই পোহা (চিড়ার) নানা খাবারের ছবিও পোস্ট করছেন, কেউ আবার বানিয়েছেন ছড়া!

খাদ্য-গবেষক ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পুষ্পেশ পন্থ বলেছেন,,”চিঁড়ে যে ভারতের সব প্রান্তেই খাওয়া হয় – এই তথ্য তো মি. বিজয়বর্গীয়র অজানা থাকার কথা নয়। এমনকি মহাভারতেও চিঁড়ের কথা পাওয়া যায়। কৃষ্ণর কাছে চিঁড়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সুদামা। মহাভারতের কাহিনী তো পশ্চিমভারতের।”  “মি .বিজয়বর্গীয়র কথা যদি মানতে হয় তাহলে কৃষ্ণ বা সুদামাও বাংলাদেশি ছিলেন!” ব্যঙ্গ করে বলেন অধ্যাপক পন্থ।

 

 

সকালবেলায় পোহা (চিড়া) আর জিলিপি একসঙ্গে খেতে ভালবাসেন মধ্যপ্রদেশের মানুষ, তাই ডিশটার নামই হয়ে গেছে ‘চিড়া (পোহা)-জিলিপি’। সর্ষে আর জিরে ফোঁড়ন দিয়ে তাতে বেশ ভাল পরিমাণে কারিপাতা, পেঁয়াজ, লঙ্কা ভেজে নিয়ে তাতে ভেজানো চিঁড়ে ঢেলে দেওয়া হয়। তারপরে তাতে হলুদ আর লবণ দিয়ে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যায় পোহা। তাতে ছড়িয়ে দিতে হয় লেবুর রস।

 

“খাবারটার উৎস মহারাষ্ট্রে। সেখানে কান্দা- পোহা নামে পরিচিত চিঁড়ার এই খাবার। ছত্রপতি শিবাজীর সেনাপতি হোলকারদের মাধ্যমে চিঁড়া (পোহা) ইন্দোরে আসে, আর সিন্ধিয়াদের হাত ধরে তা পৌঁছয় গোয়ালিয়ারে। আর এখন তো ভারতের নানা রাজ্যেই অতি জনপ্রিয় খাবার হয়ে গেছে এই চিড়া (পোহা)” বলছিলেন মি. পন্থ। এছাড়া ইন্দোর বা মধ্যপ্রদেশের শহরে-গ্রামেঅলিতে গলিতে দেখা যায় চটজলদি খাবার এই চিড়া (‘পোহা)-জলেবি’র দোকান। শুধু মধ্যপ্রদেশ নয়, আজকাল ভারতের অনেক নামী-দামী হোটেলেও সকালের জলখাবারের মেনুতে উঠে এসেছে এই চিড়া (পোহা)। বর্তমানে  অনেক বেসরকারী বিমানেও ইনস্ট্যান্ট চিড়া (পোহা) পাওয়া যাচ্ছে।

 

মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে বিবিসির-সংবাদদাতা সুরেইয়া নিয়াজি বলেছেন, “মি. বিজয়বর্গীয় যে শহরে মন্তব্যটা করেছেন, সেখানকার মানুষের সকাল শুরু হচ্ছে পোহা-জলেবি ছাড়া, এটা ভাবাই যায় না। ইন্দোরেই সবথেকে ভাল পোহা হয়। কিন্তু সেই ইন্দোরেই কেন তিনি শ্রমিকদের চিড়া দিয়ে বানানো পোহা খেতে দেখে তাদের বাংলাদেশি বলে মনে করলেন, এটা খুবই আশ্চর্যের।”

 

সামাজিক মাধ্যমেও ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করছেন অনেকে। আবার আগামী সপ্তাহে হিন্দু বাঙালীদের যে সরস্বতী পুজো আছে, তার পরের দিন দেবী মূর্তির সামনে দই-চিঁড়া দেওয়াটা একটা রীতি। অপর এক ব্যাক্তি মজা করে বলছেন, এবার তো তাহলে দেবীকে দই-চিঁড়া দেওয়া যাবে না।

এলবিএন/২৬-জ/ক/এস-বিবিসি/৭০/০৮-১


Spread the love

Follow us

আর্কাইভ

March 2023
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031