বই নিয়ে অসন্তোষ

প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০

 বই নিয়ে অসন্তোষ
Spread the love

৯৫ Views

মেলায় এসেছেন তারা। কষ্ট করে খুঁজে বের করেছেন পছন্দের বই। দেরি সইছিল না তাদের। স্টলের সামনেই শুরু করে দিয়েছেন বই পড়া।

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে শিশু চত্বর। সেখানেই দেখা হলো আগারগাঁও থেকে আগত তানসেন ইমতিয়াজের সঙ্গে। তার হাতে অনেকগুলো বইয়ের ব্যাগ। সে জানালো, বই কিনেছে দৈত্য-দানব, রাক্ষস-খোক্ষসের। সন্তানের বইয়ের পছন্দ নিয়ে যারপরনাই বিরক্ত তার বাবা রাতুল আহসান। তিনি বললেন, বাচ্চাদের জন্য ভালো কোনো বই নেই। এসব বই পড়ে ও কী শিখবে?

রাতুল আহসানের মতো শিশুতোষ বই নিয়ে বিরক্ত প্রায় সব অভিভাবকই। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেলো, অবাস্তব সব ঘটনা দিয়ে সাজানো শিশুদের বই। তবে এরও মাঝে কোথাও কোথাও মিলছে শিশুদের উপযোগী বই। সে সঙ্গে জনপ্রিয় লেখকরাও কলম ধরেছেন শিশুদের জন্য।

শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মেলার শিশু চত্বরসহ পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেলো, বাহারি সব বই দিয়ে সাজানো শিশু চত্বর। তবে সেসব বইয়ের তালিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিবাবকরা।

মিরপুর থেকে ছেলে আয়াতকে সঙ্গে নিয়ে আসা মহিউদ্দীন আলমগীর বাংলানিউজকে বললেন, শিশুদের বই নিয়ে আমি যারপরনাই বিরক্ত। কোনো বই-ই ওদের উপযোগী করে লেখা হয় না। সেজন্যই ওর ওয়ার্ড মিনিং আর ছড়ার বই কিনে দিয়েছি।

ইমদাদুল হক মিলনের শিশুতোষ সিরিজ ‘বাবান’ প্রকাশ করেছে অনন্যা। সিরিজের তিনটি বই- ‘বাবান ও টুনটুনি পাখি’, ‘বাবান ও তার বিড়ালছানা’ এবং ‘বাবান ও দশটি কাক’। প্রতিটি বইয়ের মূল্য ১৩৫।

এ বিষয়ে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমি শিশুদের জন্য লিখতে পছন্দ করি। কারণ, ওরা খুব মনোযোগী পাঠক। আর অনেকে অভিভাবক এসে বলেন, তারা আমার বই পড়েছেন, তার সন্তানরাও পড়ছেন। এ বিষয়টি উপভোগ করি। কারণ, আমি দুই প্রজন্মকে আমার বই পড়াতে পেরেছি।

জনপ্রিয় লেখকদের লেখা মেলায় আসা শিশুদের বইগুলোর মধ্যে রয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ছোট একটা নেংটি ইঁদুর’ (অনুপম প্রকাশনী), ‘মিতু তিতুর সাবমেরিন’ (বিদ্যাপ্রকাশ) ও ‘যে রকম টুনাটুনি সে রকম ছোটাচ্চু’ (পার্ল পাবলিকেশন্স)। আনিসুল হকের কমিকস ‘গুড্ডুবুড়া’ প্রকাশ করেছে কথা প্রকাশ। তার গল্প ‘ডাকাতের কবলে গুড্ডুবুড়া’ এসেছে প্রথমায়। প্রথমা থেকে আরও আসার কথা রয়েছে ‘গুড্ডুবুড়া যেভাবে ঢাকাকে বাঁচিয়েছিল’।

এর পাশাপাশি হায়াৎ মামুদের ‘যাদুকরের ভেঁপু’ (অবসর), আনোয়ারা সৈয়দ হক ‘ছানার নানাবাড়ি’ (ঐতিহ্য), ধ্রুব এষের ‘অং বং চং’ (ইকরি মিকরি) ও ‘তনু ও ছয় দফার খাতা’ (সময় প্রকাশন), আলম তালুকদারের ‘রূপকথার আজবকথা’ (পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স), জাহীদ রেজা নূর অনূদিত রূপকথা ‘ফিনল্যারে রূপকথা’ (শিশু গ্রন্থ কুটির), মাজেদুল নয়নের কিশোর উপন্যাস ‘হাউজ টিউটর’ (পুঁথিনিলয়)।

শিশুতোষ বইয়ের বেহাল দশা নিয়ে অন্যপ্রকাশের সত্ত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শিশুতোষ বইয়ের প্রধান সমস্যা হলো ভালো পাণ্ডুলিপির অভাব। সে সঙ্গে সম্পাদনার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাদের বই যদি সুসম্পাদিত না হয় তাহলে সেগুলো কোনো কাজে আসে না।

‘এর মধ্যেও কিন্তু ভালো বই যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়, হচ্ছে। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, চন্দ্রাবতী একাডেমি ও ময়ূরপঙ্খি থেকে ভালো শিশুতোষ বই প্রকাশ পাচ্ছে।’

উৎস প্রকাশনীর প্রকাশক মোস্তফা সেলিম বলেন, শিশুদের বইটি হতে হবে সবচেয়ে সুসম্পাদিত। তাদের কচিমনের বিকাশে বইয়ের শব্দচয়নসহ বিষয়ের প্রতি নজর রাখতে হবে। কিন্তু মেলায় আসা বেশিরভাগ শিশুতোষ গ্রন্থে সম্পাদনার কোনো বালাই নেই। তাই শিশু চত্বরের বেশিরভাগ স্টলে প্রচুর বই বিক্রি হলেও শিশুতোষ গ্রন্থ হিসেবে সেগুলো নিম্নমানের।

মানহীন শিশুতোষ বইয়ের বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, এ ধরনের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করতে টাস্কফোর্স মেলা পরিদর্শন করবে। অভিযোগ পেলে আগামীতে তাদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না।


Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Follow us

আর্কাইভ

June 2023
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930