সিলেট ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৪০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০
সালাহ্উদ্দিন শুভ,কমলগঞ্জ(মৌলভীবাজার):
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ও ব্যবসা কেন্দ্র শমশেরনগরে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধিতে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। শমশেরনগর চৌমুহনা থেকে চার দিকের সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকায় জন দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ও ব্যবসা কেন্দ্র শমশেরনগর চৌমুহনায় ৫টি সড়ক এসে মিলিত হয়েছে। এই চৌমুহনা থেকে পূর্ব দিকে সোজা একটি সড়ক চলে গেছে চাতলাপুর স্থল শুল্ক বন্দর ও অভিভাসন কেন্দ্রে।
চাতলাপুর স্থল সুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের উত্তর ত্রিপুরা ও আসামের একাংশের সাথে রয়েছে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য। ফলে প্রতিদিন আমদানিকৃত কমলা, আপেল, আনার, কেনো ও বিপরীত দিক থেকে বাংলাদেশী সিমেন্ট, প্রাণ আর এফ এল সামগ্রী, প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বাংলাদেশী বিভিন্ন জাতের রপ্তানিযোগ্য সামগ্রীর প্রচুর পরিমাণে পরিবহন এ সড়ক ব্যবহার করে। তাছাড়া এই চৌমুহনা ব্যবহার করে প্রতিদিন শত শত যানবাহন মৌলভীবাজার জেলা সদর, শ্রীমঙ্গল উপজেলা, মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, কুলাউড়া উপজেলা,বড়লেখা ও মাধবকুন্ড জল প্রপাত এলাকায় যাতায়াত করে। পর্যটকবাহী যানবাহন ও চা বাগানের যানবাহনগুলো এ এলাকা ব্যবহার করে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,তবে দিনে দিনে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে সড়কটি পূর্বের মত সরু রয়ে গেছে। তার উপর এ সরু সড়কের চৌমুহনা থেকে কমলগঞ্জমুখী সড়কে দুই দিকে গড়ে উঠেছে সিএনজি অটোরিক্সার স্ট্যান্ড। চৌমুহনা থেকে বিমান বন্দর সড়কের ডাকঘর এলাকায় ও চৌমুহনা থেকে চাতলাপুর সড়কেও গড়ে উঠেছে একটি সিএনজি অটোরিক্সার স্ট্যান্ড। ফলে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শমশেরনগর চৌমুহনা থেকে চার সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
শমশেরনগর বাজারে আরও একটি নতুন সমস্যা হচ্ছে প্রতিটি দোকানপাঠের সামনে গড়ে উঠেছে আলাদা ফলে দোকান। তাছাড়া দোকানীরা বারান্দায় পণ্য সামগ্রী রেখে বিক্রি করে সড়কটি আরও সুরু হয়ে গেছে। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গল হাট থেকে মোদী ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সামগ্রী নিয়ে এসে শমশেরনগর বাজারের এই সরু সড়কে রেখে পণ্য সামগ্রী খালাস করেন। এতে করেও এই দুই দিন নতুন করে যানজটের সৃস্টি হয়।
এ অবস্থায় শমমেরনগর বিএএফ শাহীন কলেজ, সুজা মেমোরিয়াল কলেজ, আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুল, হাজী মো. উস্তায়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, আব্দুল মছব্বির একাডেমী ও শমশেরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দুর্ভোগের মাঝে পড়েন। অভিভাবকরা কোমলমতি শিশুদের এই যানজট অতিক্রম করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। আবার বিকেলে তাদের নিয়ে আসেন। তাছাড়া সাধারণ মানুষজন হাটবাজার করতে, ব্যাঙ্ক বীমায় যেতে হয় যানজট অতিক্রম করে। স্থানীয় প্রশাসন ও বণিক কল্যাণ সমিতি এ সমস্যা সমাধানে কোন ভূমিকা লাখছেন বলে মনে হয় না।শমশেরনগর বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, আসলে চৌমুহনা থেকে কমলগঞ্জ সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক ও চাতলাপুর সড়কে গড়ে উঠা সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ড যানজটের অন্যতম কারণ। আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, যানজটের কারণে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সাথে তাখে আতঙ্ক সড়কে কোন দূর্ঘটনা ঘটে গেল কিনা তা ভেবে ? তিনি আরও বলেন, এখন শমশেরনগর বাজারে পথচারী চলাচলের কোন রাস্তা নেই।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে বণিক কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ, অটোরিক্সা চালক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের নিয়ে একাদিকবার বৈঠক করে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছিল। তাতেও সমাধান হচ্ছে না। তবে যখনও যানজটের সৃস্টি হয় তখন ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা সড়কে নেমে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা করেন। এ জন্য স্থায়ী সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
শমশেরনগর বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশাহিদ আলী বলেন, তারা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ৩/৪ বার যানজট মুক্ত শমশেরনগর রাখতে বসেছিলেন। এখনও সেই চেষ্টা করছেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজারের সহকারি প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, সড়কটি আগের পরিমাপে উন্নয়ন কাজ হয়েছে। ভবিষ্যতে উন্নয়ন কাজের সময় সড়ক জনপথের নির্দিষ্ট জমি বের করে কাজ হলে সড়কটি সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি মনে করেন। তাছাড়া চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশনে পরিবহন চলাচলের জন্য পেট্রোল পাম্পের কাছ থেকে চা বাগানের রাস্তা ব্যবহার করে যদি খ্রিস্টান মিশনের সামনা দিয়ে মূল সড়কে বাইপাস করা যায়, তা হলে যানজটের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। তবে এ জন্য সাংসদ ও জনপ্রতিনিধিরা ভূমিকা রাখতে হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক শমশেরনগরের যানজটের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।