চাকুরী হারানোর ক্ষোভে দুই বন্ধুকে খুন: সিলেটে এসে ঘাতকদের দূর্ঘটনার নাটক

প্রকাশিত: ৮:১৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২০

চাকুরী হারানোর ক্ষোভে দুই বন্ধুকে খুন: সিলেটে এসে ঘাতকদের দূর্ঘটনার নাটক
২২৪ Views

এফ জুম্মান/ স্টাফ রিপোর্টারঃঃ

সিলেটের ট্রাকের ভিতর থেকে দুই লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মূল  ঘাতকদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেটের আদালতে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তী মূলক জবানবন্দি প্রদান করে দুই ঘাতক।

 

গ্রেফতারকৃতরাহলো, সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দর থানার ধোপাগুলের ফৌজদার মিয়া তালুকাদেরর ছেলে ইব্রাহিম মিয়া (২১), বিশ্বনাথের শ্বাসরাম গ্রামের রুস্তুম আলীর ছেলে ফজর আলী (২৫)। এছাড়া তাদের সহযোগী হবিগঞ্জের মাধবপুরের উত্তর বেজুড়া গ্রামের আব্দুল বাছিলের ছেলে জয়নাল মিয়া (২৩কে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

 

আদালতে দেয়া ঘাতকদের জবানবন্দির সূত্র থেকে পুলিশ জানায়,চাকুরি হারানোর ক্ষোভ থেকে ঢাকা থেকে সিলেট আসার পথে হবিগঞ্জের মাধবপুরে সহকর্মী ও তার বন্ধুকে খুন করেন ট্রাকচালক ইব্রাহিম মিয়া ও হেলপার ফজর আলী। এরপর সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার লালমাটিয়া এলাকায় ট্রাকটিকে একটি দেয়ালের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে পালিয়ে যায় তারা।গতকাল শুক্রবার সিলেটের লালমাটিয়ায় ট্রাকের ভেতর থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানা এলাকার বাসিন্দা চালক জাহাঙ্গীর মিয়া ও তার বন্ধু রাজু মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

জানা যায়, শুক্রবার সকালে পৌনে ১১টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে মোগলাবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লালমাটিয়া এলাকাস্থ সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড়ের দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে একটি  (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪০৩০) ট্রাকের ভেতর (সামনে চালক ও হেলপার বসার স্থান) দুটি লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে ট্রাকটির কোনো চাকা ছিল না। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহত রাজুর বড় ভাই সুজন আহমদ বাদী হয়ে মোগলাবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

 

গ্রেফতারকৃত দুই ঘাতকদের আদালতে দেয়া  স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সিলেট মহানগরীর মোগলাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ  আকতার হোসেন জানান, চুয়াডাঙ্গার আতাউর রহমান নামের এক মালিকের ট্রাক চালাতেন  ইব্রাহিম মিয়া। গত বৃহস্পতিবার মালিক তাকে চাকুরিচ্যূত করে নতুন চালক জাহাঙ্গীর মিয়ার কাছে ট্রাক হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। গাজীপুর থেকে ইব্রাহিমের কাছ থেকে জাহাঙ্গীর ট্রাকটি বুঝেও নেন। পরে ওই ট্রাকে করে একটি কোম্পানির মাল নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন জাহাঙ্গীর ও তার বন্ধু রাজু মিয়া। সহযাত্রী হন আগের চালক ইব্রাহিম মিয়া ও তার হেলপার ফজর মিয়া। রাস্তায় পালাবদল করে ট্রাক চালানোর দায়িত্ব নেন ইব্রাহিম।

 

তাদের চালিত ট্রাকটি হবিগঞ্জের মাধবপুরে আসার পর ট্রাকের ভেতর ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা জাহাঙ্গীর মিয়া ও তার বন্ধু রাজুকে ফাঁস দিয়ে খুন করেন ইব্রাহিম ও তার হেলপার ফজর আলী। এরপর হবিগঞ্জের জগদীশপুর এসে ট্রাকের ১০টি চাকার মধ্যে চারটি খুলে ও ভেতরে থাকা আরেকটি মিলিয়ে মোট ৫টি চাকা জয়নাল মিয়ার কাছে বিক্রি করেন ইব্রাহিম ও ফজর। পরে তারা চলে আসেন সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার লালমাটিয়ায়। সেখানে একটি দেয়ালের সাথে ট্রাকটিকে ধাক্কা লাগিয়ে দুর্ঘটনা সাজিয়ে ভেতের জাহাঙ্গীর ও রাজুর লাশ রেখে পালিয়ে যান ইব্রাহিম ও ফজর।

 

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা জানিয়েছেন, দুজনের লাশ উদ্ধারের পর তদন্তে নেমে হত্যাকাণ্ডের মূল  রহস্য উদঘাটন করতে সজ্ঞম হয়েছে। পরে সিলেট থেকে আটক করা হয়েছে চালক ইব্রাহিম ও হেলপার ফজরকে। তাদের দেয়া তথ্যমতে হবিগঞ্জের জগদীশপুর থেকে ট্রাকের চাকা ক্রয়কারী ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়াকেও আটক িকরা হয়েছে।  চাকা বিক্রির ৭ হাজার টাকা ফজর মিয়ার শ্বশুর দক্ষিণ সুরমার কুজাবাইন সাকিনের ফলিক মিয়ার ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এলবিএন/২৫-জ/এফ/১১/০৩-১

Spread the love

Follow us

আর্কাইভ

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930