সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২০
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
গত ১৫ বছরের লন্ডন আর গত কয়েক সপ্তাহে শহরটির অবস্থা আকাশ পাতাল তফাৎ। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসকে প্রথমে গুরুত্ব না দেওয়া লন্ডনবাসীরা এখন নিজেদের সুরক্ষার চেষ্টায় আছেন।
বৃটেনে এবং ইউরোপে বড় বড় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এত আতঙ্কিত, ভীত-স্বতন্ত্র হয়নি কেউ। গত ১৫ বছরের চিত্র পাল্টে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। ইংল্যান্ডের সভ্য জাতি নিজেদের আড়াল করে রাখছেন। কেউ স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে আছেন, কেউবা আইসোলেশনে।
যারা লন্ডন বেড়াতে গেছেন, আন্তর্জালে শহররটিকে দেখলে থমকে যাবেন। শুধু লন্ডন কেন, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরের অবস্থা এখন যেমন, শিউরে উঠতেও পারেন যে কেউ। রাতের লন্ডন যেখানে জমকালো আলোকছটায় প্রজ্জ্বলিত থাকতো, সেখানে এখন ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে পরিবেশ। আর দিনের বেলা যেন কারফিউ লেগেছে।যারা থাকেন দেশটিতে তাদের অবস্থা শোচনীয়।
পুরো অচেনা এক নগরীর রূপ নিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত লন্ডন নগরী। চারদিকে খা খা! রাজপথ, হোটেল, রেঁস্তোরা, পাব সব শূন্য। মনে হতে পারে উনিশ শতকে ফিরেছে ইউরোপের দেশটি। প্রায় নিস্তব্ধ চারদিক। হ্ঠাৎ চোখে পড়ে কোনো মানুষের। গাড়ি-ঘোড়া চলছে দু-একটা।
রাতের লন্ডন আপনাকে শিউরে দেবে। যে শহরে রাত আসতো ভোরে, সেখানে নেই কোনো উৎসব, নেই পার্টি, বাদ্য- রাতভর উদ্দাম পরিবেশ। থিয়েটার জনশূন্য, পাবগুলো খালি। কোনো রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও মেরুদণ্ড বয়ে নেমে আসবে শীতল পরশ। ভয়ঙ্কর এ পরিবেশের পেছনে একটি মাত্র কারণ- করোনাভাইরাস।
করোনাভাইরাস মহামারী ঘোষণা হওয়ার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তার দেশের জনসাধারণকে ঘরের ভেতর অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী ১২ সপ্তাহ সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন। পেশাজীবীদের বলেছেন ঘরে বসে কাজ করতে। ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে বলেছেন অত্যাবশ্যকীয় না হলে।
লন্ডনজুড়ে এমন পরিস্থিতিকে ‘ড্রাকোনিয়ান’ বা কঠোর বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আরও বলেছেন, ‘জীবন রক্ষার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’মানুষে মানুষে উপচে পড়া ইংল্যাণ্ডের রাজপথ জনশূন্য। রাতে লন্ডনের চায়না টাউনের রাস্তা দেখে গা শিউরে ওঠে। এখানেই অল্প কদিন আগে মানুষের গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগতো। এখন সেখানে বড়জোর দু-একজনের দেখা মেলে। ওয়েস্ট এন্ডের পাব, শহরের ট্রেন স্টেশন, রাস্তায় বাস স্টেশনগুলো একেবারে ফাঁকা।
সারা পৃথিবী থেকে গিয়ে বিমানগুলো জটলা পাঁকাতো যে হিথ্রো বিমানবন্দরে, যেখানে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একটি বিমান ওঠানামা করে, সেটিও নিস্তব্ধ। লন্ডন শহরের ২৭০টি পাতাল ট্রেনে স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন ৫ মিলিয়ন যাত্রী, অথচ এখন সেগুলোতে দিনের বেলাই ভুতুড়ে পরিবেশ।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে হিমশিম খাওয়া বরিস সরকার তার দেশে আগামী ৫ সপ্তাহের জন্য সব ধরনের আয়োজন খারিজ করে দিয়েছে। বাদ পড়েছে গ্রান্ড ন্যাশনাল ও প্রিমিয়ারশিপ রাগবি। তবে দেশটির গণমাধ্যম প্রথম থেকেই সচেতনতার সঙ্গে কাজ করছে।
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ইউকেতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯০০ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৭১জন। এ পর্যন্ত তিনজন বৃটিশ বাংলাদেশি মারা গেছেন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। মৃত-আক্রান্ত সকলের পরিবারের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন বরিস জনসন। বলেছেন, ‘সবাইকে সর্তক থাকবে, হয়তোবা আমরা আমাদের অনেক স্বজনকে হারাতে পারি।
টাওয়ার হ্যামলেটসের সর্বাধিক বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা হলো হোয়াইটচ্যাপেল। এখানে আছে দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন। বিস্তৃত কাঁচাবাজার, ৫টি হাইস্ট্রিট ব্যাংক, নানা ধরনের বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইস্ট লন্ডন মসজিদ অ্যান্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার, আলতাব আলী পার্ক, শহীদ মিনার। যেখানে সারাদিন বাংলাদেশিদের আনাগোনা লেগেই থাকতো, সেখানেও সুনশান নীরবতা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছেন না কেউ।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রাণচঞ্চল মানুষগুলোর হাসি আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। সকলের মধ্যে চাপা আতঙ্ক। একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা হলে এখন আর আগের মতো জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গণ করছেন না। কনুইর সঙ্গে কনুই মিলিয়ে হ্যান্ডশেক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতার পাশাপাশি এই ভয়াবহ বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন। ভবিষ্যত খাবার সঙ্কট মোকাবিলায় নিজেদের খাবার মজুদ করতে অনেকেই ভীড় জমাচ্ছেন মার্কেটে। সারা ব্রিটেনের সুপার স্টোরগুলোতেও ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে পণ্য সংকট।