সিলেট ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৫৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০২৫
প্রতিনিধি / সুনামগঞ্জ ::
সুনামগঞ্জের নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় রূপসী বাংলা এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মন্টু ভূষণ কর (৪০)এর বিরুদ্ধে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নেত্রকোণা সদর থানার এসআই আব্দুল জলিল সংগীয় ফোর্সসহ মধ্যনগর থানা পুলিশের সহায়তায় বৃহস্পতিবার রাতে মধ্যনগর বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মন্টু ভূষণ কর স্থানীয় ডা. স্মৃতি ভূষণ করের ছেলে এবং রূপসী বাংলা এনজিওর এমডি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ‘রূপসী বাংলা এনজিও’র আড়ালে ঋণ বিতরণের নামে বিভিন্ন এলাকায় মাঠকর্মীদের মাধ্যমে সুকৌশলে মাদক ব্যবসা, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
সম্প্রতি ৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নেত্রকোণা পৌরসভার নাগড়া ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা থেকে রূপসী বাংলার এক মাঠকর্মী মো. আজহারুল ইসলাম (৪০), পিতা মোতালেব ফকির, গ্রাম কুমড়ী, নেত্রকোণাকে অপহরণ করা হয়। তিনি এনজিওর মালিকদের নির্দেশে মাদক বিক্রিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে অপহরণ করে বেধড়ক মারধর ও মুক্তিপণ দাবি করা হয় বলে অভিযোগে জানা গেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই নজরুল ইসলাম ঠাকুর বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অগাত নামা আরো ৫/৬ কে আসামি করে নেত্রকোনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন— এরশাদুল ইসলাম এরশাদ পিতা করিম মুন্সি, রফিকুল ইসলাম পিতা এরশাদ, মন্ঠু ভূষণ কর পিতা স্মৃতি ভূষণ কর, রাকিব খাঁ পিতা মানু খাঁএবং মো. আকাশ দর পিতা বাবুল দর। মামলাটি দণ্ডবিধির ৩৬৪ (অপহরণ), ৩২৫ (আহত করা), ৩০৭ (হত্যাচেষ্টা) ও ৩৪ (সহযোগী অপরাধ) ধারায় নথিভুক্ত করে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।
অভিযোগের সত্যতা মিললে বৃহস্পতিবার রাতে মধ্যনগর বাজারে রূপসী বাংলা এনজিওর অফিসের গোপন কক্ষ থেকে এমডি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মন্টু ভূষণ করকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রূপসী বাংলা এনজিও দীর্ঘদিন ধরে মধ্যনগর বাজারের সাদেক মিয়ার বাড়ির নিচতলায় অফিস পরিচালনা করে আসছে। সেখানে উচ্চ সুদের প্রলোভনে গরিব মানুষের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলনের পাশাপাশি কিছু লোককে ঋণ বিতরণ করা হতো। তবে অফিসের গোপন কক্ষে মাদক ব্যবসার লেনদেন চলত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এই এনজিওর সরকারি কোন অনুমোদন আছে কিনা তা কেউ জানেনা। বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এই এনজিওর কর্মকাণ্ড অনেক দিন ধরেই সন্দেহজনক। মাঠকর্মীদের মাধ্যমে মাদক ছড়িয়ে পড়লে আমাদের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। বাসার মালিকের ছেলে বাবলু, যিনি এনজিওটির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে, তা অস্বীকার করে বলেন, আমি বাসা ভাড়া দিয়েছি, এখানে আর কি করে আমি জানি না। এর সাথে আমি জরিত নই।
মধ্যনগর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিনু বলেন, এই ধরনের এনজিওগুলো গরিব মানুষের দারিদ্র্যকে পুঁজি করে চক্রবৃদ্ধি সুদের মাধ্যমে তাদের আরও নিঃস্ব করছে। উপরন্তু যদি তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তা সমাজের জন্য ভয়াবহ। আমি বাড়িতে নেই , এসে খুঁজ খবর নিয়ে দেখবো তাদের সরকারি কোন অনুমোদন আছে কিনা, বা অবৈধ কোন সমাজ বিরোধী কাজে সাথে লিপ্ত আছে কিনা।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও ইসলামি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, এ ধরনের এনজিও কার্যক্রম কোরআন-হাদীস পরিপন্থী এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনছে। প্রশাসনের উচিৎ দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। পুলিশ জানায়, আটক মন্টু ভূষণ করের বিরুদ্ধে দাখিল করা মামলার তদন্ত চলছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।