সিলেটের নগরজীবনে নতুন রূপে পুরানো সমস্যা

প্রকাশিত: ২:২৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০২৫

সিলেটের নগরজীবনে নতুন রূপে পুরানো সমস্যা

লন্ডন বাংলা ডেস্ক ::

আবারও নতুন রূপে পুরানো সমস্যা ফিরেছে সিলেটের নাগরিক জীবনে। আর এ সমস্যার আগুনে পুড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। এমনকি নি¤œ মধ্যবিত্তের জীবনও এখন রীতিমতো অতিষ্ঠ। কারণ, রিকশাভাড়া। অসহায় নাগরিকদের কাছ থেকে এখন দ্বিগুণ বা আড়াই গুণ ভাড়া আদায় করছে প্যাডেলচালিত রিকশা চালকরা। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ চাইছেন সাধারণ নগরবাসী।

 

সিলেটের নাগরিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ নিশ্চিতে ও যানজটমুক্ত নগরী গড়তে মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। শুধু নিষিদ্ধই নয়, সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে প্রচুর ব্যাটারিচালিত রিকশা ডাম্পিং করা হয়েছে। এমনকি, গ্যারেজেও অভিযান চালিয়ে চার্জিং পয়েন্ট, বিদ্যুতের মিটার জব্দ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের এমন অভিযানের প্রেক্ষিতে স্বস্তি নেমে আসে নাগরিক অভিযানে। অনেক রিকশাচালক তাদের রিকশা ট্রাকে বা ভ্যানে করে সরিয়ে নিয়েছেন অন্য কোথাও। মোটামুটি সিলেট মহানগরীতে এখন আর ব্যাটারিচালিত রিকশা তেমন আতঙ্কের নয়, যদিও রাতে এবং ছুটির দিনগুলোতে এখনো এ জাতীয় যানবাহনগুলোর দেখা মিলছে।

 

এমন যখন অবস্থা, তখন নতুন রূপে ফিরে এসেছে পুরানো সমস্যা। অন্তত নি¤œ আয়ের মানুষের জীবন এখন রীতিমতো অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। কারণ, প্যাডেলচালিত রিকশা চালকদের অযৌক্তি ভাড়া দাবি।

 

যেমন, এক মাস আগে নগরীর ইলেক্ট্রি সাপ্লাই রোডের নূরে আলা কমিউনিটি সেন্টারের সামনা থেকে জিন্দবাজার বারুতখানা পয়েন্ট পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশার ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। এখন প্যাডেলচালিত রিকশার ভাড়া চাওয়া হয় ৬০ টাকা। কমপক্ষে ৫০ টাকায় রফা হয়। আবার কাজিটুলা বাজার থেকে বারুতখানা পয়েন্টের ভাড়া আগে ২০ টাকায় হয়ে গেলেও এখন দিতে হয় ৪০ টাকা। একেবারে কম হলেও দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা।

 

আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের সম্পর্কেতো সবাই অবগত। ঝুপ বুঝে কোপ মারতে তারা ওস্তাদ। দু’একজন ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সবাই ১০টাকার ভাড়া ২০ টাকা আর ২০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা আদায় তাদের কাছে খুই স্বাভাবিক।

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর প্রায় সব রাস্তাতেই রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে এমন নৈরাজ্য চলছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় দেখছেন না নি¤œ আয়ের মানুষ।

 

তাদের মতে, নগরীতে গণপরিবহনের সংখ্যা আরও বাড়ালে হয়ত এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। তাছাড়া নতুন করে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ করাও জরুরী।

 

তবে ভাড়া নির্ধারণ করলেও সিলেটের রিকশা বা সিএনজিচালকদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। তারা সবসময়ই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে তৎপর। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার তেমন কোনো উপায়ও নেই।

 

সচেতন মহল মনে করছেন, গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নির্ধরণ করতে হবে। আর সেই নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া চাইলে চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার একটা ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাহলেই কেবল তাদের এমন নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে।

 

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা-ই রাফিন সরকার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। জেলা প্রশাসন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন মিলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করব। যতদ্রæত সম্ভব তা করা হবে।

 

এদিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরুর সময় সিলেটের নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নতুন করে নির্ধারণ করা হবে।

 

বিষয়টি কতদূর এগুলো বা এর সঙ্গে রিকশাভাড়াও পূণঃনির্ধারণ করা হবে কি না, বা নি¤œ আয়ের মানুষের সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে তাদের কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তা আর জানা সম্ভব হয়নি।

Spread the love