ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় লেমিনেটেড পোস্টার ছাপানো ও প্রদর্শনের হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ৭:০১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় লেমিনেটেড পোস্টার ছাপানো ও প্রদর্শনের হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

 

এলবিএন ডেস্ক: ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় লেমিনেটেড পোস্টার ছাপানো ও প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাইলে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।

রুলে সারা দেশে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে লেমিনেটেড পোস্টার ছাপা এবং প্রদর্শন বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনের সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব,শিল্প সচিব,স্বাস্থ্য সচিব, দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদিদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক ও সুলায়মান হাওলাদার ‘লেমিনেটেড পোস্টার ইন সিটি পুলস: এ বিগ থ্রেট টু এনভা্য়রনমেন্ট’ শিরোনামের প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন।

আইনজীবী মনোজ পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর‌্যন্ত সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় লেমিনেটেড পোস্টার ছাপা, প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব পোস্টার প্রদর্শন করা হয়েছে, নির্বাচনের পরপরই প্রদর্শিত সব পোস্টার অপসারণ করে যথাযথভাবে তা ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন।’

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী উপহার দেওয়ার কথা বললেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্লাস্টিকে মোড়ানো (লেমিনেটেড) নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছেন গোটা ঢাকা শহর।

প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বৃষ্টি, কুয়াশা, আর্দ্রতা কিংবা ধুলাবালি থেকে পোস্টারগুলো রক্ষা করার জন্য তারা প্লাস্টিকের ব্যবহার করছেন। ঢাকার নয়টি ওয়ার্ডে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পোস্টারই প্লাস্টিকে মোড়ানো। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, আশেপাশের অন্তত ২০টি ওয়ার্ডেও একই অবস্থা।

তারা আরও বলেছেন, বছরের পর বছর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পড়ে থেকে পরিবেশের ক্ষতি করা ছাড়া এগুলোর আর কোন কাজ নেই। বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক নর্দমায় গিয়ে জমা হয়ে বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণ হবে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার হোসেন বলেছেন, এই প্লাস্টিক তৈরিতে যেসব রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার হয়, সেগুলো বিষাক্ত এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

‘পোস্টার মোড়ানোর জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিক পলিথিনের চেয়ে খানিকটা মোটা হয়। কিছু বিশেষ রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পলিথিনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে এই প্লাস্টিক তৈরি করা হয়। এগুলো আবার সূর্যের আলো থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন করে,’ যোগ করেন তিনি। শুধু পরিবেশবিদেরাই নন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, ‘ঢাকার প্রতিদিনকার বর্জ্য অপসারণ করতেই আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এগুলো (লেমিনেটেড পোস্টার) অপসারণ করতে আমরা আরও বিপদে পড়বো।’ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক জানিয়েছেন, রাস্তার টোকাইরা এসব পোস্টার এবং প্লাস্টিক সংগ্রহ করে এখানে-সেখানে ফেলে রাখে। এক সময় শহরের যত্রতত্র এই প্লাস্টিক ছড়িয়ে যায়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘পোস্টারে প্লাস্টিকের ব্যবহার সবার জন্যই দুশ্চিন্তার বিষয়। যেহেতু ইসির অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই আমরা তাদের অনুমতি ছাড়া কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’তবে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

আর্কাইভ

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031