সিলেট ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:০৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২০
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে বিগত একশ’ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যে কর্মহীনদের সংখ্যার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ২৩ শতাংশ বেড়ে কর্মহীনদের ওয়েলফেয়ার বেনিফিটের আবেদন ২.৮ মিলিয়নে পৌঁছেছে। মে মাস পর্যন্ত কর্মহীন হয়ে পড়েছে ছয় লক্ষাধিক মানুষ। বেকারত্বের কবলে পড়েছে ব্রিটিশ বাংলাদেশিরাও। কমিউনিটি নেতারা বলছেন, গত তিন মাসে কর্মহীন হয়েছে লাখো বাংলাদেশি। যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, তারা আরও বড় ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছে।
১৯৫৪ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল পার্সি বেঙ্গল বেকারির। করোনার সংক্রমণ শুরুর আগে এর ১৭ টি শাখার কার্যক্রম চলছিল। বাঙালিপাড়া পূর্ব লন্ডনে ৬৬ বছর ব্যবসা করার পর এ সপ্তাহে বেকারিটির সবগুলো শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।লন্ডনের বাঙালিবহুল দ্বিতীয় এলাকা ক্যামডেন। সেখানকার রাসেল স্কোয়ার এলাকার ইমপেরিয়াল লন্ডন গ্রুপের সাতটি হোটেলে গত কয়েক যুগে কাজ করছেন বাংলাদেশি নারী-পুরুষ। ব্রিটেনে করোনার সংক্রমণ শুরুর আগ পর্যন্ত এই কোম্পানির হোটেলগুলোতে কয়েকশ’ বাংলাদেশি কাজ করতেন। লকডাউন শুরুর পর গত তিন মাস ধরে আবাসিক হোটেলগুলো বন্ধ রয়েছে। ইমপেরিয়াল গ্রুপ লকডাউনের শুরুতেই অস্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই করেছে। বুধবার এই রির্পোট লেখা পর্যন্ত স্থায়ী কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে বেতনের আশি শতাংশ করে।
ইমপেরিয়াল লন্ডন গ্রুপের একটি হোটেলে গত সাত বছর ধরে কাজ করেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি সোহেল মিয়া। তিনি জানান, কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে চার-পাঁচ বছর ধরে কাজ করা ব্যক্তিদের দ্রুত অবসরের অফার দিয়েছে।কোম্পানি এছাড়াও অতীতের কাজের পারফরমেন্সের ভিত্তিতে ছাঁটাই চলবে বলে জানিয়েছে কতৃপক্ষ।করোনাজনিত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা লেগেছে লন্ডনের মিনিক্যাব ইন্ড্রাস্ট্রিতেও। ব্রিটেনে কয়েক লাখ বাংলাদেশি এই ক্যাব চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। আতিক চৌধুরী ও ফখরুল ইসলাম নামের দুজন বাংলাদেশি ক্যাবচালক বুধবার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ক্যাবে ট্রিপ না থাকায় ব্যবসা নেই। তাই আপাতত তারা গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন না। আগামী ৪ জুলাই থেকে রেস্টুরেন্টসহ সবকিছু খুললে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন তারা।
ব্রিটেনে বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অর্গানাইজেশন- বিসিএর সাবেক সভাপতি পাশা খন্দকার এমবিই বলেন, করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরা ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।প্রবীণ কমিউনিটি নেতা ও ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কে এম আবু তাহের চৌধুরী জানান, ব্রিটেনে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত তিন মাস তারা কাজে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, গত তিন মাসে ব্রিটেনে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি বেকার হয়ে গেছে। তবে আগামী ৪ জুলাই সরকার সবকিছু খুলে দেবার সিদ্বান্ত নেওয়ায় কর্মহীনদের একটি বড় অংশ কাজে ফিরতে পারবে বলে মনে করছেন তিনি।
আবু তাহের চৌধুরী আরও জানান, নথিভুক্তির বাইরে থাকা প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি গত তিন মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কাগজপত্র না থাকায় তারা ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে কোনও ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে না। বৈধতা না থাকায় তাদের অনেকেরই ব্রিটেনে কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই। তারা যা আয় করতেন, সব টাকাই দেশে পাঠিয়েছেন। তাদেরকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে লন্ডন হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রণোদনা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান আবু তাহের চৌধুরী।