সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৪১ অপরাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০২০
বাপ্পী রানী পালঃ
এক সময় শীতের আগামনী বার্তার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রাম অঞ্চলে পিঠাপুলির উৎসব শুরু হতো। শুধু মাত্র গ্রামের বাড়িতে নয় প্রতিটি বাজার এলাকায় জম জমাট হয়ে উঠতো পিঠা বিক্রির ব্যাবসা। কুয়াশা মোড়ানো শীতের হিমেল হাওয়ায় ধোঁয়া উঠা পিঠার স্বাদ না নিলে যেন তৃপ্তি মিঠতো না অনেকের। প্রতিদিন সরিষা বাটার ঝাজ আর চিতই পিঠা খেতে রাস্তার বিভিন্ন দোকানে ভীর করতো ক্রেতারা। মৌসুমি এই পিঠার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল পিঠা প্রেমিকদের। ফলে শীতের শুরুতেই চিতইসহ নানা রখম পিঠার ব্যবসা জমে উঠতো। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নানা রকমের শীতের পিঠা। তৎকালিন সময়ে সিলেট অঞ্চলে মেয়ের জামাইয়েরে বাড়িতে তৈরী পিঠা নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল। যতই শীত বাড়ে ততই যেন মানুষের পিঠা বানানোর ব্যস্থতা বেড়েই চলত। বাহারি রকমের পিঠা তৈরির উৎসবে আত্মহারা হত সর্বস্তরের মানুষ। এখন কর্মচাঞ্চল্য এই ব্যস্থময় জীবনের গর্ভে পিঠা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শীতের সময়ে গ্রামাঞ্চলের প্রতি ঘরেই চিতই, দুধচিতল,পুলি, নকশি, পাটিসাপটা, ভাপা,চুসি,সীম, পাখন, তেলে ও গোটা পিঠাসহ হরেক রকমের পিঠা তৈরিতে ব্যস্থ হয়ে পড়তেন গৃহিণীরা।
কালের বিবর্তনে বাড়িতে পিঠা তৈরির সেই উৎসবমুখর আমেজ হারিয়ে। মানুষ ফুটপাতের দোকান থেকে পিঠা কিনে নিজে খাচ্ছেন ও ছেলেমেয়েদেরও খাওয়াচ্ছেন। হতদরিদ্র্র মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম পন্থা হয়ে ওঠে পিঠা বিক্রি। বালাগঞ্জের ওসমানীনগরের প্রত্যান্ত অঞ্চলের একাধিক হতদরিদ্র মানুষ পিঠা বিক্রির উপার্জিত অর্থের মাধ্যমে চালাছে তাদের সংসার। শেিতর তীব্রতা কমতে শুরু করলেও বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরসহ সিলেট অঞ্চলের বাজার এলাকা বিভিন্ন সড়কের পাশে, পাড়া- মহল্লার মোড়ে মোড়ে বহু হতদরিদ্র মানুষ পিঠা বিক্রি করছেন। ভোর বেলা থেকে শুরু করে অনেক রাত পর্যন্ত এই পিঠা বিক্রি চলে। বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার মানুষ এসব পিঠা খাওয়ার জন্য ভীড় করতে দেখা যায়। এতে এই সব বিক্রেতার রোজগার হয় ভালো।এসব পিঠা বিক্রির কাজে পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির গৃহিণীরাও যুক্ত হচ্ছেন তাদের সঙ্গে। পৃথক পৃথক দোকান সাজিয়ে অনেকেই পিঠা বিক্রির কাজ করতে দেখা যায়।
প্রবীন এক পিঠা বিক্রেতা জানান, আগে শীত আসলে গ্রামের মহিলারা ভোরে ঘুম থেকে উঠে পিঠা বানাতে বসত। তখন পরিবারের সবাই মিলে মিশে পরিবারের মধ্যে চলত পিঠা খাওয়ার উৎসব। কিন্তু এখন তা আর হয় না। সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবন যাত্রা বদলে যাচ্ছে অনেক। কালের বিবর্তনে সাথে সাথে আমাদের গ্রামীন সংস্কৃতি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে পিঠা পাগল মানুষ জন্য বাজারে বিক্রিকৃত পিঠার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। শীতের আগমনে দিন মজুরি ছেড়ে অনেকেই ফুটপাতে পিঠা তৈরি করে বিক্রি করেন। গড়ে প্রায় ৪০০- ৫০০ টাকা লাভ হয়ে থাকে। পিঠা বানানোর কাজে স্ত্রীরা সাহায্য করে থাকেন। রান্ন বান্নার কাজ সেরে গৃহিণীরা পিঠার চাল কুটে গুঁড়ো করে বিকেলে দোকান সাজিয়ে বসেন। সরজমিনে উপজেলার গোয়ালাবাজার, তাজপুর, বুরুঙ্গা, দয়ামীর ও উমরপুর, কলারাই,বুরুঙ্গা বাজারের বেশ কয়েকটি পিঠার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, চিতই পিঠা দিয়ে সাজানো রয়েছে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো দোকানগুলো। আর তাতে ভীর করছেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার পিঠা প্রেমিকরা। চিতই পিঠার সাথে খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি ভর্তা (সুটকিভর্তা,সরিষা ভর্তা, মরিচের ভর্তা, ধনিয়া পাতা ভর্তা) ইত্যদি। বিক্রেতারা পিঠা গুলো বানাতে বানাতেই ক্রেতারা গরম পিঠা কিনে রাস্তার পাশে দাড়িয়েই মজা করে খাচ্ছে।
প্রতিটি চিতই পিঠা বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা। চিতই পিঠার উপকরন হিসেবে ব্যবহার করা হয়, গুর, নারকেল, সিদ্ধ চালের গুঁড়া, শুকনা মরিচ, গুঁড়া আধা ইত্যাদি। পিঠা ব্যবসায়ী আসলাম বলেন, প্রতিদিন হাজার দের এক টাকার মত পিঠা বিক্রয় করতে পারেন তিনি। মূলত সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি হলেও তুলনামূলক সন্ধ্যার পর পিঠার চাহিদা বেশি থাকে। সব মিলিয়ে ৪থেকে ৫শ টাকা আয় করতে পারেন তিনি। এই টাকা দিয়েই চলে সংসার। তিনি শুধু মাত্র শীতের মৌসুমে কেবল এ ব্যবসা শুরু করেন । অন্য সময় বিভিন্ন কাজ করেন বলে জানান।তাজপুর বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুর রহমান জানান, শীতে সরিষা বাটা, ধনিয়া পাতা বাটা দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। বাসায় তৈরি পিঠার চেয়ে একটু বেশিই মজা দোকানের তাই তিনি প্রায় প্রতিদিনই পিঠা কিনে খেয়ে থাকেন।
বালাগঞ্জ বাজারের মিজানুর রহমার নামের এক পিঠা ব্যবসায়ীর বলেন, বছরের অন্য সময় অন্যান্য পেশার কাজ করলেও এই সময়টা পিঠা ব্যাবসা করি। ব্যবসা কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা বিক্রি করতে পারি। তবে লাভ লোশকান বুঝিনা আমার সংসার কোন রখম চলছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে পিঠার চাহিদাও বাড়ছে বলে জানান তিনি।
পিঠা পাগল একাািধক ব্যাক্তিরা জানান,এক সময় শীতে শুরুতে বাড়িতে গৃহিণীরা বাহারি পিঠা তৈরি করতেন। কিন্তু এখন আর নানা জামেলায় বাড়িতে আর পিঠা বানানো হয় না। সে কারণে ফুটপাথের এসব দোকান থেকে ভাপা পিঠা কিনে খেয়েছেন। পরিবারের জন্য ও নিয়ে যাচ্ছেন।