সিলেট ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:২০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০২০
ডেস্ক রিপোর্টঃঃ
গত ৮ মার্চ শনিবার সাউথ ফ্লোরিডার লেক ওয়ার্থের কালচারাল সেন্ট্রারে দিনব্যাপি তৃতীয় ফ্লোরিডা বই মেলা অনুষ্টিত হয়। দুপুর দু টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ব্ই মেলার মুল অনুষ্টান থাকলেও তা বিকাল চারটা থেকে জমে উঠে । কালচারাল সেন্টার উন্মুক্ত মঞ্চে অসাধারন একটা ষ্টেজে মুল অনুষ্টান চলে । বইয়ের নানান ষ্টলের পাশাপাশি ছিল নানান ধরনের ষ্টল । তবে এবার মোট চারটি বইয়েল ষ্টল ছিল । ঢাকার কোন প্রকাশনি ফ্লোরিডা বই মেলায় আসার সুযোগ না থাকলে বই মেলার অন্যতম উদ্ব্যেক্তা বিশিষ্ট গজল শিল্পী সামিরা আব্বাসী জানান, আগামীতে ব্ই মেলায় তাদের অংশ গ্রহন থাকবে ।বই মেলার আরেকজন সংগঠক আনোয়ারুল খান দিপু জানান, সাউথ ফ্লোরিডায় প্রায় ১৬ থেকে ১৮ হাজার প্রবাসী আছেন ।
তাদের কথা চিন্তা করেই তিন বছর আগে বই মেলা শুরু করেছি । সময় লাগছে আমাদের , বই মেলা হল লেখক সাহিত্যিক কবি শিল্পীদের মিলন মেলা , তাদের নতুন বই নিয়ে তারা উপস্থিত হন । এবারর সর্বোচছ সংখ্যক কবি সাহিত্যি সাংবাদিক ও লেখকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছি । তারা সবাই তাদের নতুন বই নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন । আসলে নিউ ইয়র্কের বই মেলার সাথে সমন্বয় করে বই্ মেলা করতে পারলে ঢাকার প্রকাশকরা আসবেন । এবার প্রবাসী লেখকদের বই আলাদা করে উপস্থাপন করা হয়েছে ।
বিকাল সাড়ে পাচটার পর থেকে জাতায় সংগীতের মাধ্যমে মুল অনুষ্টা্ন শুরু হয় । ছিল বাচচাদের গান, নাচ , আলোচনা, ও এওয়ার্ড সিরিমনি । ঢাকা ক্লাবের মহিলা সদস্যরা এক রংয়ের আকাশি কালারের শাড়ী পড়ে ছিলেন পুরো বই মেলা জুড়ে । ছিল প্রবাসী কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর । সময় বাড়তে থাকে সারা ফ্লোরিডার জনপ্রিয় লেখকরা তাদের পরিজন নিয়ে উপস্থিত হন ।
ফ্লোরিডা বই মেলায় প্রবাসী লেখকদের সম্মেলনে রুপ লাভ করে। লেখক নির্মাতা,গবেষক, শিল্পী ডা সেজান মাহমুদ, যার লেখা বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে পড়ানো হয়। অপারেশন জ্যাকপট,লাশ কাটা ঘর তার অসামান্য সৃস্টি। তিনি বই লিখেছেন ১৭ টি, গত কাল তার ১১ টি বই প্রদর্শিত হয় । এ বছর তার” প্রেম+অনুকাব্য =প্রেমানুকাব্য” “হাভার্ডের স্মৃতি ও অন্য এক আমেরিকা” বেরিয়েছে সেগুলো ও ছিল । সেজান মাহমুদ হুমায়ুন আহমদের সমসাময়িক লেখক।
তৃতীয় বই মেলায় প্রবাসী ষ্টার লেখকদের মধ্যে ছিলেন,- সেজান মাহমুদ,সামিরা আব্বাসী,জুয়েল সাদত, সরকার হারুন, ডা সুলতান সালাউদ্দিন, আফরেজা রহমান,জাহানারা খান বিনা,সোহেল সুলতান,আরমান সোবহান,রুকশানা শরিফা,নাজমুন নাহার ইউনা,স্বপন মাঝি, জনাব জুনায়েদ আক্তার ,সালমা রহমান মিনু, নাজমুস আকিব, জাহান রীমা প্রমুখ। নিউইয়র্ক থেকে উপস্থিত ছিলেন সময় টিভির হাসানুজ্জামান সাকি ও এ প্রজন্মের জনপ্রিয়্ শিল্পী ও ফ্যামিলি ক্রাইসেসের শোভন আনোয়ার।
ডা সুলতান সালাউদ্দিন এর সাথে পরিচয় আটলান্টা ফোবানায়, সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন আমি নাকি ভাল কবিতা লিখি, ভাল বক্তা- সেজান মাহমুদকে বলছেন.। সেজান মাহমুদ বলেন তার লেখার সাথে আমি পরিচিত । বাংলাদেশীদেন মধ্যে জনপ্রিয় ডেমোক্র্যাট লিডার জুনায়েদ আক্তার আমার কবিতার বই, সিডি নেবার জন্য তাড়া দিলেন।
প্রধান অতিথি লেক ওযার্থ বীচের মেয়র পাম রিওলিও চম্যকার বক্তব্য রাখেন, ও প্রক্লেমেশন প্রদান করেন। প্রক্লেমেশন গ্রহন করেন ঢাকা ক্লাবের সভাপতি মিম খান । তিনি সে সময় মিম খান ঢাকা ক্লাবের সকলকে ,মঞ্চে ডাকেন । পাম এর সাথে এসেছিলেন তার স্বামী ও । ডাকেন।পাম এর সাথে আগেও দেখা হয়েছে এবার সে এসেছিল স্বামী নিয়ে, সে বেচারা সবার ক্যামেরা ম্যান হয়ে গেল।
বিশেষ অতিথি নির্মাতা, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ছিলেন বই মেলার মধ্যমনি। লেখকদের আড্ডায় জীবনের নানান গল্প শোনান। তার আর্কিটেক্ট হবার গল্প সহ নারী দিবসের কথা। সহজ সরল সাবলিল, কিছুটা চুপচাপ তার আচরন। তবে মিশেছেন সবার সাথেই। তিনি ১২ তম বই মেলায় আবার আসবেন জানালেন। প্রবাসী সব লেখকদেরই বই ছিল মেলায়। প্রবাসীদের অনেক বই। সাউথ ফ্লোরিডার বিভিন্ন শহরের প্রবাসীরা বই মেলায় পরিবার পরিজন নিয়ে উপস্থিত হন । অনেকেই নানান বইয়ের ষ্টলে ঘুরে বই কালেকশন করেন। খাবারের দোকানে ও দেশীয় নানান মুখরোচক খাবার । নানান দেশীয় লোকজ আসবাব পত্রের ষ্ঠল । বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯ পর্যন্ত ছিল লেক ওয়ার্থের কালচারাল সেন্টারটি মুখরিত ।
আড্ডা গল্পে,ও নারী দিবসের নানান আলোচনায় মুখরিত ছিল বই মেলা। আয়োজক ঢাকা ক্লাবের সদস্য দের মধ্য মহিলারাই বেশী, তারা এক রংয়ের শাড়ি পড়ে ছিলেন। বাচচাদের ছিল নানান একটিভিটি।। সামগ্রিক আয়োজনটা অসাধারণ। লেখক, গবেষক, শিল্পী,সুরকার নানান গুনের মানুষ ডা: সেজান মাহমুদ বলেন, আমাদের ফ্লোরিডাতে বই মেলা , এটা আমাদের জন্য বাড়তি পাওয়া । বই আমাদের জীবনের সঙ্গি । আমরা বই ছাড়া টিকে থাকতে পারব না । শিল্প সাহিত্যের বিকাশের মাধ্যমেই বাংলাদেশীদের অবদান বিশ্বের কাছে পৌছাবে । বিচার করলে আমাদের সাহিত্যের কদর বিশ্বের কাছ প্রশংনিয় ।
মুক্তিযোদ্বা ও বিশিষ্ট লেখক ডা: সুলতান সালাউদ্দিন বলেন, বই হল অক্সিজেনের মত । যে যত বেশী পড়বে সে তত বেশী বিকশিত হবে। লেখক ও ডেমোক্রাট লিডার জুনায়েদ আক্তার বলেন, আমাদের জীবনের সাথে সাহিত্যকে মিশিয়ে দিতে পারলেই সব অশান্তি, হতাশা , না পাবার বেদনা ভুলে থাকা যায় । উত্তর আমেরিকার সব লেখকরাই আমাকে নানান মাধ্যমে চেনেন, এটা একটা বিরাট পাওয়া।৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস ছিল, বই মেলায় সাউথ ফ্লোরিডার সকল সংগঠনের নারী সংগঠকরা উপস্থিত ছিলেন । নারীরা সাবাই মঞ্চে গিয়ে নারীদের অধিকার, তাদের নানা অবদান তুলে ধরেন । মেহের আফরোজ শাওন বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে যাবার কথা বলেন । তিনি এ্ই বিশেষ দিনটিতে বই মেলা বাড়তি আকর্ষন হিসাবে আখ্যায়িত করেন ।
ঢাকা ক্লাবের দিপু খান ছিলেন পুরো বই মেলার নৈপথ্যর বিরাট ভুমিকায় । দেশ থেকে অনেক বই দিপু খান সংগ্রহ করে প্রদর্শন করেন। দিপু খান গত কয়েক মাসে অনেক প্রবাসীদের দিয়ে অনুরেোধ করে বাংলাদেশ থেকে বই আনিয়েছি । দিপু খান জানান সরকার যদি সুলভে বই আনতে সহযোগীতার করত, তাহলে আমাদের অনেক উপকার হত ।
প্রবাসী লেখকরা বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট গ্রুপে বসে অড্ডা দেন । নতুন ব্ই , প্রকাশনার নানান মাধ্যম, প্রবাসে বই আনার নানা্ন বিড়ম্বনা নিয়ে চলে জম্পেশ আড্ডা । প্রকাশনার নানান বিষয় নিয়ে লেখকরা নিজেদের মধ্য আলোচনা ও সম্ভবনা নিয়ে আলোচনা করেন । কেউ কেউ তাদের নতুন নতুন বই নিয়ে লাইভে ছিলেন । এক কথায় বই মেলার পুর্নতায় পুর্ন ছিল লেক ওয়ার্থের বীচের পাশের কালচারাল সেন্টারের প্রাঙ্গন ।
বই মেলার আয়োজক ঢাকা ক্লাবের সভাপতি মিম খান, একজন দক্ষ সংগঠক হিসাবে তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বেশ কয়েকটি অনুষ্টানের সাথে সাথে ব্ই মেলাকেও প্রানবন্ত করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন । ঢাকা ক্লাবের দিপু খান আমাকেও অনেক বই গিফট করেন, যা আমার জন্য ছিল বাড়তি পাওয়া । চমৎকার আয়োজনে ৩য় বই মেলাটা জমজমাট ছিল।