সিলেট ২৮শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
গ্রামের বাড়িতে আনন্দ উল্লাস: খুশিতে আত্বহারা গোটা সিলেট
অন্তরা চক্রবর্তীঃঃ
যুব বিশ্বকাপ ফাইনালে বিজয় ছিনিয়ে এনছে বাংলার যুবরা। আর সেই বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেছেন সিলেটের তরুণ ক্রিকেটার সাকিব। ফাইনাল ম্যাচে ২ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন সাকিব। তার আগ্রাসী বোলিংয়ে ম্যাচের প্রথমেই ভারতকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। প্রথম ৩ ওভারে একটি ওয়াইড ছাড়া কোনো রান দেননি এই যুবা।
ফলে ৩ উইকেটে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ব সেরার মুকুট পরল সাকিবের দল। বিশ্বকাপ জয়ে যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য তানজিম হাসান সাকিবের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় আনন্দের বন্যা বইছে। গতকাল সোমবার দিনব্যাপি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আনন্দ উল্লাস করে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। উল্লসিত জনতা সাকিবের বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবাকে মিষ্টিমুখ করান।
এসময় সমর্থকেরা সাকিব-সাকিব বলে জয়ধ্বনী দিয়ে তারা বলেন সাকিবের কৃতিত্বের জন্য বালাগঞ্জসহ আজ সারা দেশের মানুষ বিজয়ানন্দে ভাসছে। বিশ্বকাপ জিতে নিজ বাড়িতে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। তার সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় সাকিবের মা-বাবা মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে সাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
সাকিবের বাবা গৌছ আলী স্বপ্ন দেখেনে- বিশ্ব ক্রিকেটে সাবিক যেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। আর সাকিব যেন অনেক দূর এগিয়ে যাক এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন তার মা সেলিনা পারভীন। প্রতিভাবান এই ক্রিকেটার ফাইনাল ম্যাচে ২ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের তিলকচাঁনপুর গ্রামের গৌছ আলী ও সেলিনা পারভীন দম্পতির ঘরে ২০০২ সালের ২০ অক্টোবর সাকিবের জন্ম। ৩ বোন ১ ভাইয়ের মধ্যে সাকিব ৩য়। পরিবারের একমাত্র ছেলে হিসেবে সাকিবের প্রতি ভালোবাসার অন্ত নেই।
তানজিম হাসান সাকিব বছরের শুরুতে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে সিরিজে আলো ছড়িয়েছিলেন। এতটুকু বয়সে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশনেও অভিষেক হয়ে গেছে। শুধু অভিষেক হয়েছে বলে নয়, ডিপিএলে বিকেএসপির হয়ে নিয়মিত উইকেট নিয়ে বাড়তি আলোচনা সৃষ্টি করেছিলেন এই ক্রিকেটার।
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় ক্রিকেটে বল হাতে নিয়মিত ভালো করা সাকিবকে নিয়ে এখনই স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নীতি নির্ধারকরা। ১৭ বছর হওয়ার আগেই এ বছরই এসএসসি দেওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে মতো পেশাদার লীগে সিনিয়রদের বিপক্ষে যেই পারফরম্যান্স দেখিয়েছে তা প্রশংসার দাবীদার। ইংল্যান্ডে নতুন বলে নিয়মিত উইকেট আনে সাকিব। এই রকম পারফরম্যান্স ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুর্ধ ১৯ এর হয়ে আগে কেউ করতে পারেনি। একমাত্র পুত্র সাকিবকে নিয়ে বড় স্বপ্ন বালাগঞ্জবাসীর। আর আজ তা পূর্ণ হলো সাকিবের বিশ্বকাপ জয়ের মধ্যেদিয়ে।
ছোটবেলাই ক্রিকেট ছিল ধ্যান-জ্ঞান ছিলো তার। সাকিবের বিদ্যার হাতেখড়ি আদিত্যপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পড়াশোনায়ও ছিলো দারুণ মেধাবী। পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হয় বালাগঞ্জ ডি এন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে অধ্যয়নত অবস্থায় (২০১৬ সালের প্রথম দিকে) বিকেএসপির তৃণমূল বাছাইয়ে অংশ নেয়। মৌলভীবাজার জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত বাছাইয়ে সাকিব ফাস্ট বোলার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে।
সাকিবের বন্ধুরা বলেন, ক্রিকেটের প্রতি তার এতোটাই আশক্তি ছিল ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণিতে পড়ার সময় কোথাও কোনো ম্যাচের খবর পেলে সে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে খেলায় চলে যেতো। সাকিবের চাচাতো ভাই বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মুনিম বলেন, তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন রয়েছে আশা করি তার মাধ্যমে সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
সাকিবের বাবা গৌছ আলী বলেন, আমি প্রথমে চাইনি সাকিব ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত হোক। আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে লেখা পড়ায় মনোযোগ দিক। কিন্তু আজ আমার ছেলে দেশের বাইরে গিয়ে খেলেছে এবং বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে। এলাকাবাসী সবাই আমার সাকিবের জন্য দোয়া করছেন। আমিও এখন চাই সাকিব বড় ক্রিকেট খেলোয়াড় হোক।