রপ্তানির আদেশ স্থগিতে সংকট তৈরির আশঙ্কা

প্রকাশিত: ৩:২০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২০

রপ্তানির আদেশ স্থগিতে সংকট তৈরির আশঙ্কা

লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় কমছে ভোগ ব্যয়। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপের অনেক দেশে মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় কমে গেছে বিক্রি। অনেক শহরেই গার্মেন্টস পণ্যের স্টোর সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানিতে। ইতিমধ্যে ক্রয়াদেশ দেওয়া বেশকিছু চালান আপাতত না পাঠানোর অনুরোধ করেছেন সেখানকার ক্রেতারা। আবার কেউ কেউ পুরো ক্রয়াদেশের সব পণ্য এখনই না পাঠানো কিংবা পোশাক বানানোর প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখার (ফেব্রিক না কাটা) অনুরোধ জানিয়েছেন।তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক  বলেন, ইতিমধ্যে অন্তত ২০ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এমন সিদ্ধান্তের তথ্য রপ্তানিকারকরা তাকে অবহিত করেছেন।

 

এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে রপ্তানিকারকদের জন্য বড়ো ধরনের তারল্য সংকটের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের শুরুর দিকে আমদানি কমে গেলেও এবার রপ্তানি কমতে শুরু করায় সমস্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় রাজস্ব আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও সংকট তৈরি হতে পারে।নারায়ণগঞ্জের এমবি ফ্যাশনের মালিক ও বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম  ইতিমধ্যে তার প্রতিষ্ঠানে ক্রয়াদেশ দেওয়ার পর সম্প্রতি ইউরোপের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তা কমিয়েছে।

 

কিছু অংশ রপ্তানি না করার অনুরোধ জানিয়েছে। ইউরোপে বিক্রি কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।আরেক রপ্তানিকারক শহীদুল হক মুকুলও একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান অল্প পরিমাণ পণ্য পাঠানো এবং বাদবাকি ক্রয়াদেশের পণ্য আপাতত তৈরি না করার কথাও জানিয়েছে। ক্ল্যাসিক ফ্যাশনের মালিক বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম জানান, ৫০ হাজার পিছ শার্ট রপ্তানির ঋণপত্র হওয়ার পরও এখন উত্পাদন আপাতত বন্ধ রাখতে হয়েছে।সূত্র জানিয়েছে, অন্যান্য রপ্তানিকারদেরও একটি অংশ এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। তাদের আশঙ্কা, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ইউরোপের দেশগুলো ধীরে ধীরে আরো সতর্ক হয়ে যাবে। ফলে সেখানে বিক্রি আরো কমতে থাকবে।

 

ইতিমধ্যে ইউরোপের অন্যতম বড়ো অর্থনীতির দেশ ইতালি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পুরো দেশই বলা চলে কোয়ারেন্টাইনে। ধীরে ধীরে একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে অন্য দেশগুলোতেও। আমেরিকার বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের চলাচলও সীমিত হয়ে গেছে।বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই যায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে। ড. রুবানা হক বলেন, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আমরা কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছি। বিশেষত আগামীতে রমজান ও ঈদকেন্দ্রিক বেতন-বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন উদ্যোক্তারা। পরিস্থিতি তারা সরকারকে অবহিত করছেন।অবশ্য সব উদ্যোক্তাই তাদের রপ্তানি আদেশ কমার কথা বলছেন না।

 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলি ইপিজেডে অবস্থিত ডেমিন এক্সপার্ট নামের একটি কারখানার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাদের ক্রেতারা অর্ডার কমানো কিংবা শিপমেন্ট বাতিলের বিষয়ে কিছু এখনো বলেননি। তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।বাংলাদেশের অন্যতম বড়ো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইউরোপভিত্তিক ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এম এখনো পোশাকের সরবরাহ কমানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি বলে প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা অফিস সূত্র জানিয়েছে। এইচ অ্যান্ড এমের বাংলাদেশ অফিসের প্রধান জিয়াউর রহমান  বলেন, তবে বিশ্ব পরিস্থিতির বাস্তবতা বিবেচনায় যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।

 

এদিকে সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার বা ২৫ হাজর ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এটি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ১ শতাংশের সমান।পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর  বলেন, আমাদের রপ্তানির প্রধান দুটি বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় এখন করোনার থাবা। শুরুতে কাঁচামাল, এক্সেসরিজের সরবরাহে সমস্যা হওয়ার পর এখন পণ্যের চাহিদা কমছে। এটি দ্বিগুণ সংকট। এর আগে কখনোই এমন দ্বিমুখী সংকটময় পরিস্থিতি হয়নি।

Spread the love

আর্কাইভ

January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031