সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০২০
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃঃ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নভেল করোনা ভাইরাস বা কাভিড-১৯-এর সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে ইউরোপের সব দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতালির জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান দলের পাঁচ শীর্ষ নেতা নিজেদেরকে ‘সেলফ-কোয়ারেন্টাইন’-এ রাখার কথা জানিয়েছেন। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর সফর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই হুবেই প্রদেশেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। খবর: বিবিসি, আল-জাজিরা ও সিএনএনের।
চীনে কমলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গতকাল পর্যন্ত বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি। চীনে মঙ্গলবার নতুন করে মাত্র ১৯ জন কডিভ-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ কমায় হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের সব অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে চীন। গতকাল উহান পরিদর্শন করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি এ সময় করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা শোনেন। চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে ভয়াবহ পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। প্রেসিডেন্টের সফর সেই আস্থারই বহিঃপ্রকাশ।
চীনের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ইতালিতে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং জনসমাগমে না যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইউসেপ্পে কোন্তে ৬ কোটি মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জরুরি ভ্রমণের ক্ষেত্রেও অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, হাতে আর সময় নেই। ইতালির স্বার্থে আমাদের সবাইকেই কিছু না কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। পুরো ইতালি একটি সংরক্ষিত এলাকায় পরিণত হবে। আর এটা এখনই করতে হবে। সোমবার ইতালিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬৬ থেকে ৪৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে এবং মারা গেছেন ২৬ জন। সম্প্রতি অক্সন হিলে অনুষ্ঠিত কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর তার সংস্পর্শে যাওয়া রিপাবলিকান পার্টির পাঁচ জ্যেষ্ঠ নেতা নিজেদেরকে সেলফ-কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা জানিয়েছে। তাদের মধ্যে টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজও ছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ঐ অনুষ্ঠানে ছিলেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার স্বাস্থ্য এখনো ভালো এবং তিনি কোনো পরীক্ষা করেননি। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি স্টেফানি গ্রিশাম বলেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন—এমন কারো সংস্পর্শে ট্রাম্প যাননি। এছাড়া, ভাইরাসের কোনো লক্ষণও তার নেই।
এদিকে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ার পর এক ডেমোক্র্যাট নেতাও সেলফ-কোয়ারেন্টাইনে গেছেন। হাজার হাজার আরোহী নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে সাগরে আটকেপড়া একটি প্রমোদতরি সানফ্রানসিসকোর কাছে অকল্যান্ড বন্দরে নোঙর করেছে।দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩১ জন, এতে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫১৩ জনে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল খবরে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ইরানে এই রোগে আরো ৫৬ জন মারা গেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার আক্রান্ত এবং ২৯০ জন মারা গেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে আরো বেশি বলে ধারণা করা হয়।জাপানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১০ জনে, এদের মধ্যে ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ডায়মন্ড ড্রিনসেস প্রমোদতরিতে আক্রান্ত ৬৯৬ জনও রয়েছেন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
ইতালির পর ইউরোপের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়িয়েছে ফ্রান্স ও জার্মানিতে। ফ্রান্সে ১ হাজার ১১৬ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে আর জার্মানিতে ধরা পড়েছে ১ হাজার ১১২ জনের। ফ্রান্সে ৩০ জনের মৃত্যু হলেও জার্মানিতে দুই জন মারা গেছেন। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। ফ্রান্সে সংস্কৃতি মন্ত্রী ফ্র্যাংক রিস্টার সরকারের প্রথম সদস্য যিনি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তার দলের সদস্যরা বলেছে যে, গত সপ্তাহের বেশ কয়েক দিন তিনি পার্লামেন্টে কাটিয়েছেন। যেখানে আরো অনেকে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেছে।
ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে কানাডা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, দেশটিতে এখন যারাই পৌঁছাবে তাদেরকে স্বেচ্ছায় ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে যে, বিশ্বব্যাপী মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বাস্তব।