সিলেট ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৪৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২০
প্রতিনিধি/ চট্টগ্রামঃঃ
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে যাতে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে বা পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবুও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫ শতাধিক ভোটকেন্দ্র নিয়ে চিন্তিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।এবার ৫৫টি ওয়ার্ডে (সংরক্ষিতসহ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের ১৬২ নেতাকর্মী।
যাদের মধ্যে ১০৭ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। অধিকাংশ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী একাধিক থাকায় ওয়ার্ডসমূহকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এলাকাগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রভাবও রয়েছে।চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল আলম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নির্বাচন অফিস থেকে কোন ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র ঘোষণা করা হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা, দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের ক্ষোভ, বিরোধী দলের শক্ত প্রার্থী থাকা ও এলাকাগুলো ক্রাইম জোন হওয়ার কারণে কেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে শনাক্ত করা হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আগের দায়িত্ব পালন করা কাউন্সিলর যারা দলের মনোনয়ন পাননি তারাও ভোটে দাঁড়িয়েছেন। অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে জোর প্রচারণা চলছে। এতে অবৈধ উপায়ে যারা অর্থ আয় করেছেন তারা অনেকটা দৌড়ের ওপর আছেন। তাদের পক্ষের এবং বিপক্ষের লোকজন সক্রিয় আছে এলাকায়। এতে ওইসব ভোটকেন্দ্রের এলাকাগুলোতে দলাদলির প্রভাবে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।এদিকে, গত শুক্রবার বিকেলে সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বাবুল দাশসহ ৪ জন।
পরদিন গত শনিবার নগরীর ৩৮ নম্বও ওয়ার্ড দক্ষিণ হালিশহর চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর মো. হাসান মুরাদ অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিদ্রোহী প্রার্থী মো.হাসান মুরাদ ও তার সন্তানসহ ৭ জন আহত হয়।চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৭৩৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫ শত কেন্দ্রকে ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগাম সতর্কতা হিসেবে সংশ্লিষ্ট থানা ও পুলিশ ফাঁড়িগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোটকেন্দ্রগুলো ও আশপাশের এলাকায় থানা পুলিশের মোবাইল পার্টি, পিকেট পার্টি, হাঁটা পার্টি, গাড়ি টহল পার্টিকে বেশি সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। বিট পুলিশিংকে আরো কার্যকর ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের আশপাশে বসাতে বলা হয়েছে চেকপোস্ট।
এছাড়া ভোটের কয়েক দিন আগে থেকে ভোটকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাগুলোতে দুর্বৃত্তদের দমনের জন্য বাসাবাড়িতে ব্লক রেইড দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডগুলোর চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এলাকায় অবস্থান করছে কি না সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। যেখানে পুলিশের নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যাতে নির্বাচনের আগে বা পরে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। পাশাপাশি ৭ থেকে ৮টি ওয়ার্ডকে সংঘাতপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানেও বৈধ অস্ত্রধারী ব্যবহার ঠেকাতে শিগগির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে পুলিশ।চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, চসিক নির্বাচনে ৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৫ শতাধিক কেন্দ্রকে ঝুকিপূর্ণ হিসেবে নেয়া হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে কেন্দ্রের নাম বলা যাবে না। এসব কেন্দ্রে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধিসহ করণীয় ঠিক করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে বৈধ অস্ত্রধারীদের থানায় অস্ত্র জমা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে এসব ভোটকেন্দ্র এলাকায় পূর্বের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের উপর নজর রাখা হচ্ছে।এদিকে, চসিক নির্বাচনে মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের আচরণবিধি মনিটরিংয়ে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন। ৪১ ওয়ার্ডে ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের আচরণবিধি মনিটরিং করার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়েও কাজ করছেন।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের স্টাফ অফিসার বুলবুল আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদিনই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ৩২টি অভিযোগ এসেছে। এরমধ্যে ২০ টির অভিযোগ সমাধান করা হয়েছে। বাকি ১২টি অভিযোগ সমাধানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।উল্লেখ্য, আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চসিক নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ জন। নারী ভোটার ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ জন। চসিক নির্বাচনের জন্য ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্র ও ৪ হাজার ৮৮৬টি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য মোট ১৬ হাজার কর্মকর্তা নির্ধারণ করা হয়েছে।এবার চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনসহ মোট ৭ জন। আর ১৬৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর এবং ৫৬ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।