সিলেট ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:২৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২৪
লন্ডন বাংলা ডেস্কঃঃ
বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে অন্তত ২০ হাজার রোহিঙ্গা। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভ্যালের এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের মংডু সীমান্তে অনেক রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছে। সংখ্যাটা কমপক্ষে ২০ হাজার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিগত মাসহগুলোতে রাখাইনে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধে অনেক বেসামরিকের মতো বিপাকে পড়েছে আগে থেকে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষও। শেষ উপায় হিসেবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে বলে জানিয়েছে অলাভজনক সংস্থা ডক্টর উইদাউট বর্ডারস। তারা জানায়, কক্সবাজারে তাদের টিম পালিয়ে আসা অন্তত ৩৯ জন রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা দিয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালে মিয়ানমারে নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর বছরের পর বছর চলে আসা রোহিঙ্গা নিপীড়ন জোরাল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তারা বাংলাদেশের একাধিক শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। নিহতদের মধ্যে গর্ভবতী নারী ও তার ২ বছরের মেয়েও রয়েছে বলে জানা গেছে। বেশ কিছু লাশ নাফ নদী ধরে বাংলাদেশেও ভেসে এসেছে। টেকনাফের একজন এনজিও কর্মী বাংলাদেশে বেশ কিছু লাশ দাফনের দাবি করেছেন।
একজন রোহিঙ্গা জানান, ড্রোন হামলায় মংডু এলাকায় তার ৯ জন আত্মীয় নিহত হয়েছেন। আর আহত চার জন বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা ও টহল বাড়িয়েছে বিজিবি। অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের মংডুতে ড্রোন হামলা চালানো হয়। গুলিও করা হয়। আরাকান আর্মি এই হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে কমপক্ষে ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।
টেকনাফ এলাকার এনজিও কর্মী মাহবুব আলম মিনার বলেছেন, ‘আমার তত্তাবধানেই ১৭০ জন রোহিঙ্গার লাশ আমরা এখানে দাফন করেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাফন করা হয়েছে শাহপরীর দ্বীপে বড় মাদ্রাসা মসজিদের কবরস্থানে, সেখানে ৫৫টি লাশ দাফন করা হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমি যে তথ্য পেয়েছি তাতে টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের ওই পাড়ে কমপক্ষে সাত থেকে ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে।
টেকনাফে এক ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুন নূর বলেন, ‘ড্রোন হামলা ও গুলিতে আমাদের পরিবারের চারজনসহ আমার পরিচিত মোট ৯ জন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। আহত অবস্থায় পালিয়ে আসতে পেরেছেন চারজন। তাদের মধ্যে আমার বোন ও তার ছেলে-মেয়েরা আছে। তাদের বাংলাদেশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আমার জানা মতে সীমান্তের ওপারে ২০-৩০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ।
আর কুতুপালং ক্যাম্পের ইউনূস আরমান বলেন, ‘কিছু রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নভাবে আসছেন। তবে আসার অপেক্ষায় আছেন কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। তারা মংডুতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মি উভয়ের তোপের মুখে আছে।
মিয়ামারের আরাকানের সিটুএ-এর বাংলাদেশের সাবেক মিশন প্রধান মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম ডয়চে ভ্যালেকে বলেন, ‘কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমার বাহিনীতে যোগ দিয়েছে, ফলে এখন মংডু এলাকার রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির টার্গেটে পরিণত হয়েছে। ফলে ওই ড্রোন হামলা আরাকান আর্মি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমরা যে খবর পাচ্ছি তাতে প্রতি দিনই সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। আর তারা সীমান্তে এসে জড়ো হচ্ছেন। সীমান্ত সীল করা থাকায় তারা বাংলাদেশে ঢুকতে পারছেন না।’ তিনি বলেন, ‘মংডুতে যা হচ্ছে, তা যদি না কমে, তাহলে বাংলাদেশ সীমান্তে চাপ বাড়তেই থাকবে। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।’