মুক্তির একমাত্র ধর্ম ইসলাম

প্রকাশিত: ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২০

মুক্তির একমাত্র ধর্ম ইসলাম

সৃষ্টির শুরু লগ্ন থেকে মানুষ জাতির হেদায়াতের জন্য মহান রাব্বুল ‘আলামীন পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করেছেন অসংখ্য নবী-রাসূল (‘‘আলাইহিমুস সালাম)। নাযিল করেছেন বহু আসমনী কিতাব ও সহীফা। তাঁরা যুগে যুগে তাওহীদের বাণী প্রচার করে গেছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। নবীর অবর্তমানে মানুষ যে বাতিল ও মিথ্যাকে সত্য মনে করে গ্রহণ করেছিল নবীগণ এসে মানুষের সামনে সে বাতিল ও মিথ্যার অসারতা বর্ণনা করেছেন এবং সত্যের পরিচয় তুলে ধরেছেন। বহু ঈশ্বরের বাণীর পরিবর্তে মহান আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের বাণী শুনিয়েছেন।

 

 

সর্বশেষ আল্লাহ তা‘আলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাইয়িদুল মুরসালিন, খাতামুন্নাবিয়্যিন হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত মানব ও জিন জাতির হেদায়াতের জন্য নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন। সেই সাথে তার উপর নাযিল করেছেন সর্বশেষ মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআনে কারীম। অতএব কুরআন নাযিল হওয়ার পর যেমন অপরাপর সকল ধর্মের কিতাব রহিত হয়ে যায়। তেমনি শেষ নবীর আবির্ভাবের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল নবীর আনীত ধর্মও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এবং মুক্তির একমাত্র পথ হিসেবে ইসলাম ধর্মকেই মনোনীত করা হয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন,

 

إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ

অর্থ: ‘আল্লাহর নিকট মনোনিত ধর্ম একমাত্র ইসলাম’। (সূরা আলে ইমরান: ১৯)

উক্ত আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে কাসীর রহ. লেখেন,

إخبار من الله تعالى بأنه لا دين عنده يقبله من أحد سوى

الإسلام، وهو اتباع الرسل فيما بعثهم الله به في كل حين،

حتى ختموا بمحمد صلى الله عليه وسلم، الذي سد جميع

الطرق إليه إلا من جهة محمد صلى الله عليه وسلم، فمن لقي

الله بعد بعثته محمدًا صلى الله عليه وسلم بدِين على غير

شريعته، فليس بمتقبل. كما قال تعالى: { وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ

الإسْلامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ [وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ]

} [آل عمران:85 ] وقال في هذه الآية مخبرًا بانحصار

الدين المتقبل عنده في الإسلام: { إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ

الإسْلامُ }

 

 

এই আয়াত দ্বারা এই সংবাদ দেয়া উদ্দেশ্য যে, আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দীন কেবল ইসলাম। আর সর্বযুগে আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত নবীদের ওহীর অনুসরণ করার নাম ইসলাম। সর্বশেষ এবং সকল নবীর সমাপ্তকারী হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তার নবুয়তের পর পূর্বের সকল পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন। এখন যে কেউ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হওয়ার পর তার শরী‘আত ব্যতীত অন্য কোন শরী‘আত গ্রহণ করে মৃত্যু বরণ করবে তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অপর আয়াতে বলেন, وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

যে ব্যক্তি ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্ম তালাশ করবে কখনো তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আলে ইমরান: ৮৫)।

 

 

হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ এই আয়াতের অধিনে লেখেন, এই আয়াতে নাস্তিক্য চিন্তাধারার মূলৎপাটন করা হয়েছে। যাতে উদারতার নামে কুফর ও ইসলামকে এক করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং একথা প্রচার করা হচ্ছে যে, ভাল কাজ করলে ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হলে যে কোন ধর্মাবলম্বীই মুক্তি পাবে- সে ইহুদী, খ্রীষ্টান অথবা মূর্তিপূজারী যেই ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন। শর্ত হল ভাল কাজ ও উত্তম চরিত্রের পাবন্দী থাকতে হবে। এটা মূলত ইসলামী নীতিমালাকে মূলৎপাটন করারই নামান্তর। কারণ, এর সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, ইসলামের কোন ভিত্তি নেই। এটা একটা কাল্পনিক বিষয়, যা কুফরের পোষাকেও পাওয়া যেতে পারে। পবিত্র কুরআনের এই আয়াত এবং এজাতীয় অসংখ্য আয়াত দ্ব্যার্থহীনভাবে ঘোষণা করেছে, যেমনিভাবে অন্ধকার ও আলো একত্র হতে পারে না অনুরুপভাবে এটা একেবারেই অযৌক্তিক ও অসম্ভব বিষয় যে, ইবাদত ও আনুগত্য যেমন আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় তদ্রুপ অবাধ্যতা ও বিদ্রোহও আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় হবে। যে ব্যক্তি ইসলামের কোন একটি মূলনীতি অস্বীকার করবে সে নি:সন্দেহে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি বিদ্রাহী ও রাসূলগণের শত্রু। চাই সে ব্যক্তি শাখাগত আমল ও প্রথাগত চরিত্র মাধুর্যে যতই সুন্দর দৃষ্টিগোচর হোক না কেন, পরকালের মুক্তির উপায় সর্বপ্রথম আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুগত্যের মাঝে নির্ভরশীল। যে ব্যক্তি এ থেকে বঞ্চিত তার কোন কর্ম ধতব্য নয়। পবিত্র কুরআন এমন লোকদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে, فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا অর্থ: ‘কিয়ামতের দিন আমি তাদের কোন {আমল} ওজন করার ব্যবস্থা রাখব না’। (সূরা কাহ্ফ: ১০৫)

 

 

ইসলাম সার্বজনীন একটি ধর্ম

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম বিধান। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র সম্পর্কে তাতে দিক নির্দেশনা রয়েছে। এই আধুনিক যুগেও কুরআনের বিধান যুগোপযোগী। পক্ষান্তরে অন্যান্য ধর্মে জীবনের অনেক বিষয়ের সমাধান নেই। আর আধুনিক বিষয়ের তো আলোচনাই নেই। এই বিষয়েও ইসলামের সত্যতা ফুটে উঠে। নতুন করে ইসলামে কোন বিধানের সংযোজনের প্রয়োজন নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

অর্থ: আজ আমি তোমাদের জন্য আমার দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং আমার নিয়ামতকে তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন {ধর্ম} মনোনীত করলাম। (সূরা মায়িদা: ৩)

 

 

পৃথিবীতে ইসলামের পূর্বে অনেক ধর্ম ছিল এবং এখনও আছে। ইসলামের পূর্বে আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে এমন যেসব ধর্ম ইসলাম আবির্ভাব কালে ছিল সেগুলোর মধ্যে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্ট ধর্ম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য ধর্ম যেমন বৌদ্ধ ধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম ইত্যাদি ধর্ম যেহেতু আসমানী কিতাব নাযিলকৃত ধর্ম নয় এবং তৎকালিন সময়ে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্ট ধর্মই বিস্তৃত পরিমন্ডলে বিরাজমান ছিল। বিধায় পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে উক্ত দুই ধর্মের আলোচনা করা হয়েছে। উক্ত দুই ধর্মের অনুসারীরা তাদের আসমানী কিতাবের বিভিন্ন বিধানকে পরিবর্তন করে ফেলেছে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সেই কথা বলেছেন। অন্যান্য ধর্ম অক্ষত থাকেনি। বরং তাতে পরিবর্তন হয়েগেছে। সেই ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

َإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُمْ بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَيَقُولُونَ

عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

 

 

অর্থ: আর তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা বিকৃত উচ্চারণে মুখ বাকিয়ে কিতাব পাঠ করে যাতে তোমরা মনে কর তারা কিতাব থেকেই পাঠ করছে। অথছ তারা যা আবৃত্তি করছে তা আদৌ কিতাব নয় এবং তারা বলে যে, এসব কথা আল্লাহর তরফ থেকে আগত। অথচ এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নয়। তারা বলে যে, এটি আল্লাহর কথা অথচ এসব আল্লাহর কথা নয়। আর তারা জেনে শুনে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। (সূরা আলে ইমরান: ৭৮)

 

 

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَفَتَطْمَعُونَ أَنْ يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِنْ بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

তোমরা কি এই আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে। যখন তাদের একদল জেনে বুঝে আল্লাহর কালাম শ্রবণ করে তারপর তার তা বিকৃত করে। অথচ তারা তা জানে। (সূরা বাকারা: ৭৫)

অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

َوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ

 

 

সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য পাওয়ার জন্য বলে, ‘এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাদের হাত যা রচনা করে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তারা উপার্জন করে তার জন্য শাস্তি তাদের। (সূরা বাকারা: ৭৯)

عن عبد الله بن عباس رضي الله عنهما، قال: ” يا معشر المسلمين، كيف تسألون أهل الكتاب، وكتابكم الذي أنزل على نبيه صلى الله عليه وسلم أحدث الأخبار بالله، تقرءونه لم يشب، وقد حدثكم الله أن أهل الكتاب بدلوا ما كتب الله وغيروا بأيديهم الكتاب، فقالوا: هو من عند الله ليشتروا به ثمنا قليلا، أفلا ينهاكم ما جاءكم من العلم عن مساءلتهم، ولا والله ما رأينا منهم رجلا قط يسألكم عن الذي أنزل عليكم “

 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে মুসলিম সমাজ! কি করে তোমরা আহলে কিতাবদের নিকট জিজ্ঞাসা কর? অথচ আল্লাহ তাঁর নবীর উপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, তা আল্লাহ সম্পর্কিত নবতর তথ্য সম্বলিত, যা তোমরা তিলাওয়াত করছ এবং যার মধ্যে মিথ্যার কোন সংমিশ্রণ নেই। তদুপরি আল্লাহ তোমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, আহলে কিতাবরা আল্লাহ যা লিখে দিয়েছেন, তা পরিবর্তন করে ফেলেছে এবং নিজ হাতেসেইে কিতাবের বিকৃতি সাধন করে তা দিয়ে তুচ্ছ মূল্যের উদ্দেশ্যে প্রচার করেছে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ। তোমাদেরকে প্রদত্ত মহাজ্ঞান কি তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করার ব্যাপারে তোমাদের বাঁধা দিয়ে রাখতে পারে না? আল্লাহর শপথ! তাদের একজনকেও আমি কখনো তোমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে দেখিনি। (সহীহ বুখারী: ২৬৮৫)

 

 

হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে মুসলমান সকল! তোমরা কিভাবে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞাসা কর? অথচ তোমাদের কিতাব যা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাযিল হয়েছে তা আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে নতুন সংবাদদাতা, যা তোমরা পড়ো, যা পুরনো হয়ে যায়নি। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সহীহ হাদীস শরীফেও অপরাপর ধর্ম রহিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিধান পাওয়া যায়।

 

 

এ বিষয়ে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার একটি হাদীস লক্ষ্য করুন,

أن عمر بن الخطاب أتى النبي صلى الله عليه و سلم بكتاب أصابه من بعض أهل الكتاب فقال يا رسول الله إني أصبت كتابا حسنا من بعض أهل الكتاب قال فغضب وقال امتهوكون فيها يا بن الخطاب فوالذي نفسي بيده لقد جئتكم بها بيضاء نقية لا تسألوهم عن شيء فيخبروكم بحق فتكذبوا به أو بباطل فتصدقوا به والذي نفسي بيده لو كان موسى حيا ما وسعه إلا أن يتبعني

 

 

হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রা. নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে কোন আহলে কিতাব (ইহুদীদের) থেকে একটি কিতাব নিয়ে আসলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি একজন আহলে কিতাব থেকে একটি সুন্দর কিতাব পেয়েছি। বর্ণনাকারী বলেন, নবীজী (হযরত উমর রা. এই কিতাব দেখে) রাগান্বিত হয়ে গেলেন এবং বললেন, হে উমর ইবনে খাত্তাব! তোমরা কি তাতে হয়রান হয়ে পড়েছ? যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ তার কসম! নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট স্বচ্ছ উজ্জ্বল দীন নিয়ে এসেছি। তাদেরকে কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করোনা। তাহলে তারা সত্য সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করবে আর তোমরা তা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করবে। অথবা মিথ্যা সম্পর্কে অবহিত করবে আর তোমরা তা সত্য বলে মেনে নিবে। যেই সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ সেই যাতের কসম! যদি হযরত মূসা {আ.} জীবিত থাকতেন তাহলে তাঁর পক্ষেও আমার দীনের অনুসরণ ব্যতীত কোন সুযোগ থাকত না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ২৬৪২১)

 

 

এই হাদীসের আলোকে বোঝা গেল যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি অন্য ধর্মের কিতাব দেখে রাগান্বিত হয়েছেন। হাদীসের শেষে একথাও তিনি বলেছেন, হযরত মূসা ‘আলাইহিস সালাম যদি জীবত থাকতেন তাহলে তার জন্যও আমার ধর্মের অনুসরন করা ব্যতীত অন্য কোন সুযোগ থাকত না। এতে কি বোঝা যায় না যে, একজন নবী যদি নিজ ধর্ম বাদ দিয়ে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করতে বাধ্য থাকেন তাহলে অপরাপর ধর্মের অনুসারী যারা নবী নন তাদের বেলায় ইসলাম ধর্ম মেনে নেয়া ছাড়া মুক্তির কোন উপায় থাকে না!।

 

 

এখন সর্বশেষ একটি দাবির নিরসন করা জরুরী মনে করছি। তা হল, বর্তমানে কিছু শিক্ষিত মানুষ বলে বেড়ায়, সকল ধর্ম সঠিক। আমরা সব ধর্মকে স্বস্থানে সঠিক মনে করি। এখন যার যার ধর্ম পালন করলে মুক্তি পেয়ে যাবে । পবিত্র কুরআনে সূরা কাফিরুনের এই আয়াত لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِين দিয়ে তারা এ স্বাপেক্ষে দলিল দিয়ে থাকেন। তাদের এ দাবির একেবারেই অবান্তর। কুরআন ও হাদীসের অর্থ ও উদ্দেশ্য নেয়ার ক্ষেত্রে মনগড়া বিষয় যেন না হয়ে যায় এবিষয়ে সকলেরই লক্ষ্য রাখা কাম্য। কেননা নবীবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ

 

যে ব্যক্তি কুরআনের ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান না রেখে তাফসীর করে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়। (মুসনাদে আহমাদ: ৪/২৫০)

 

 

এই আয়াতের তাফসীরে হযরত মাওলানা ছানাউল্লাহ পানিপতি রহ. লেখেন, ‘এই আয়াতটি মূলত পূর্ববর্তী আয়াতের বিষয়গুলোকে দৃঢ়তর করার জন্য। উদ্দেশ্যে হল, তোমরা তোমাদের ধর্ম পরিত্যাগ করবে না, আর আমরাও আমাদের ধর্ম পরিত্যাগ করব না’। (তাফসীরে মাযহারী: ১০/৩৫৫)

 

 

‘সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে’ এ তাফসীর ও উদ্দেশ্য গ্রহণ করা মারাত্মক ভুল। কেননা, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পরও নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য কাফেরকে দীনের প্রতি দাওয়াত দিয়েছেন এবং কাফেররাও মুসলমানদেরকে ইসলাম মানার কারণে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। সুতরাং কুরআন ও হাদীসের আলোকে উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এই বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে বুঝে এসেছে যে, বর্তমান যুগে পরকালে মুক্তির জন্য ধর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্মকেই বেছে নিতে হবে। মুক্তির পথ কেবল ইসলামই। অন্যান্য ধর্ম অনুসারীদের মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ব্যতীত মুক্তির অন্য কোন খোলা নেই।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক বিষয় বোঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।

Spread the love